ভূমিকা
বাংলার কবি পুনর্জন্ম সম্বন্ধে একটি ভয় প্রকাশ করেছিলেন ’আমায় হয়তাে করতে হবে আমার লেখা সমালােচন’—মনে হচ্ছে নিজের লেখার দায় দ্রুত শেষ হওয়াই ভালাে। যখন আমার বনগুচ্ছ কবিতাবলীর জন্যে ভূমিকা লেখার কথা উঠলাে, লুপ্ত না হয়ে লিপ্ত হবার ভয় সত্যই দুরূহ মনে হ’লো। নিজেকে জড়িয়ে থাকা শিল্পীর পক্ষে শাস্তি; ছড়িয়ে যাওয়া ছাড়িয়ে চলাই তার ধর্ম। মাঠের পথে, জাহাজ নৌকোর ঘাটে, প্লেনের উচ্চ হাওয়ায় ঘুরেছি, বাড়ি ফিরেছি। স্তরে-স্তরে লােকালয়ের দান অন্তরজীবনে পূর্ণ হলাে। আজ বেলাশেষে সেই পরিক্রমা একটিমাত্র মৃৎরেখায় পরিণত। উপরে আকাশ, পাশে দিগন্ত। মাটি, ধরণী, বসুন্ধরা যে-নামেই হােক ভূমিস্পর্শ অভিযানই আমার স্বপ্রকাশ, তার অন্য ভাষা নেই, ভাষ্য নেই। সংসারে একটি মৃন্ময়ী বাসা বেঁধেছিলাম সেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা। যাবার সময় কত দূরে জানি না, কিন্তু এইবেলা বলতে চাই ভূমিকা আমার শুধু এই। যা লিখেছি তারই মৃত্তিকায় গড়া প্রদীপ রইলাে, আরাে দু-সন্ধ্যা তুলসী-তলায় জ্বলুক। যদি আমার ভাগ্যে থাকে।