“ছোটোদের মহাভারত” বইটির ভূমিকাঃ
পৃথিবীতে যে চারটি মহাকাব্য লিখিত হয়েছে তার মধ্যে মহাভারতই সব থেকে বড়াে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়। এই বিস্ময়কর মহাকাব্যটি ঠিক কবে লেখা হয়েছিল তা নিয়ে পণ্ডিতমহলে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। কেউ কেউ অনুমান করেন খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার অব্দে গ্রন্থটি লেখা হয়েছিল। মূল মহাভারত সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং পঞ্চম বেদ বলে স্বীকৃত। গ্রন্থটি আঠারােটি পর্বে বিভক্ত এবং শ্লোক সংখ্যা এক লক্ষ। মহাভারত গ্রন্থটির বিশালতার কথা ভেবে পণ্ডিতমহলের একাংশের ধারণা, এটি কোনাে একজন ব্যক্তির লেখা নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সম্মিলিত প্রয়াস গ্রন্থটি। কারণ বৈদিকযুগে বেদ বিভাগকারী ঋষিদের ব্যাস নামে অভিহিত করা হত।
এখনও পর্যন্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত মতানুযায়ী দ্বৈপায়ন নামক এক ঋষি মহাভারত লিখেছেন। তার জীবন সম্পর্কেও বিশেষ কিছু জানা যায় না। মহাভারতে তিনি নিজেকে যেভাবে উপস্থাপিত করেছেন সেই অনুযায়ী তার পিতার নাম ছিল পরাশর মুনি এবং মাতা দাসরাজের কন্যা সত্যবতী।
অলৌকিক রহস্যময় পরিবেশে তাদের মিলনে জন্ম নেন দ্বৈপায়ন। যেহেতু সত্যবতী তার পুত্রকে এক দ্বীপে জন্ম দিয়েছিলেন তাই তার নাম দ্বৈপায়ন রাখা হয়েছিল। তার দেহের রং ছিল ঘাের কালাে, তাই পরবর্তীকালে অনেকে তাকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন নামেও ডাকতে থাকেন। জন্মের পরই তিনি তপস্যায় চলে যান। সরস্বতী নদীর তীরে এক আশ্রমে সুদীর্ঘকাল তপস্যা করে সর্ব শাস্ত্রজ্ঞ হন। তাকে দেখতে ভয়ানক কুৎসিত ছিল বলে শােনা যায়। তিনি বেদকে চারভাগে ভাগ করেছিলেন বলে তার অপর নাম ছিল বেদব্যাস।
কথিত আছে দেবতা গণেশ তার মুখ থেকে শুনে শুনে মহাভারত কাব্যগ্রন্থটি বদরিকাশ্রমে বসে তিন বছরে লিখে সম্পূর্ণ করেছিলেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, নগর, ধর্ম, দর্শন, ভাবনা-চিন্তা ইত্যাদির সংমিশ্রণে মহাভারত এক অমর মহাকাব্য। রাজনীতি, সমাজনীতি, আধ্যাত্মিক চিন্তন ইত্যাদি জটিল বিষয়গুলি এক অদ্ভুত মুনসীয়ানায় এমন আকর্ষণীয় এবং উপভােগ্যভাবে পরিবেশন করা হয়েছে যে গ্রন্থটির আবেদন দেশ এবং কালের সীমা অতিক্রম করে সর্বকালের সর্বযুগের এক ক্লাসিক পাঠ্য হিসাবে বিবেচিত হয়।
এ গ্রন্থটি মূল মহাভারতের কাহিনি অবিকৃত রেখে যথাসম্ভব তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে ছােটো-বড়াে সকলের উপযােগী করে লেখা হল। আমার বিশ্বাস বইটি পড়ে ছােটো-বড়াে—সকল বয়সের পাঠকেরই ভালাে লাগবে। পরিশেষে, বইটি প্রকাশের ব্যাপারে শ্রী কমল মিত্র মহাশয়ের আন্তরিক উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাই।