“ভ্রমণসমগ্র – ২” ফ্ল্যাপের লেখা কথা:
ভ্রমণকাহিনি নিয়ে যেসব পাঠকের মাঝে নেতিবাচক মনােভাব রয়েছে এই বইটি তাদের সেই মনােভাব বদলে দেবে। ভ্রমণকাহিনি যে কত সুখপাঠ্য হতে পারে, তারা তা উপলব্ধি করতে পারবেন। এটা কোনও অতি সয়ােক্তি নয়—এটা এ বইটি সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাসেরই স্বীকারােক্তি মাত্র।
সাধারণত যিনি দেশ ভ্রমণ করেন, ভ্রমণজনিত যাবতীয় অভিজ্ঞতা এবং আনন্দ ব্যক্তিগতভাবে তিনিই অর্জন করেন। ওটা হয়ে যায় একান্তই তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। অনেকটা সিন্দুকে বন্দি হীরে-মুক্তোর মতাে অমূল্য ধন। যে ধন কাউকে ছুঁতেও দেয়া হয় না—নিতেও দেয়া হয় না। আর কেউ কেউ যখন কালেভদ্রে ভ্রমণকাহিনি লিখেনও, তবে তাতে উচ্ছ্বাস আর আমিত্বের প্রাচুর্য এতই বেশি থাকে যে, সেখান থেকে ভ্রমণকাহিনির স্বাদ খুঁজে পাওয়া সমুদ্রে ডুব দিয়ে সুচ খুঁজে বের করার মতােই এক দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় পাঠকদের জন্য।
সৌভাগ্যক্রমে ‘ভ্রমণসমগ্র ২’ বইটি তেমন দোষে দোষী নয়। বরং লেখিকা বিশাল এই পথিবীর নানা প্রান্তে ভ্রমণ করেছেন তার সমগ্র পাঠকসমাজকে সাথে নিয়ে । ভ্রমণের আনন্দ আর অভিজ্ঞতাকে নিঃস্বার্থভাবে তিনি বণ্টন করেছেন সবার মাঝে। বিদেশিদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সাথে তুলনা করেছেন আমাদের আবেগ-অনুভূতিকে।
জাতিসংঘের কল্যাণে, পুলিশ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে, কখনােবা সমাজ সচেতন নারী হিসেবে ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর বহু দেশ। কম্বােডিয়া, সে তাে খেমারুজদেরই দেশ; লেখক এখানকার সাধারণ মানুষদের দেখতে চেয়েছেন যাদের হাসি-কান্না নিয়ে রচিত হয় না আগামীকালের ইতিহাস; কিন্তু সত্যিকারের ইতিহাস রচনা করে তারাই।
মিতালী হােসেন যে দেশে গিয়েছের তীক্ষভাবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন। তুলে ধরেছেন সেখানকার কৃষ্টি-সৃষ্টি, জীবনমান, আচার-অনুষ্ঠান এবং সর্বোপরী তুলে ধরেছেন দেশটির নাতিদীর্ঘ ইতিহাস। যা কিছু তিনি আন্তরিকতা দিয়ে উপলব্ধি করেছেন হৃদয় দিয়ে তার বর্ণনা করেছেন। নির্মোহ দৃষ্টিতে, নির্মেদ বর্ণনায় ভ্রমণকাহিনিগুলাে লেখকের অজান্তেই হয়ে উঠেছে এক অদ্বিতীয় ভ্রমণ সংকলন। এক অনন্য সাহিত্যকর্ম।
সংকলনটি ভ্রমণপিয়াসীদেরকে একসাথে অনেক রকমের দেশ, সংস্কৃতি আর প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানাের স্বাদ মেটাবে।