“শহীদ টিপু সুলতান” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
ভারতবর্ষের ইতিহাসে টিপু সুলতানই ছিলেন সবচেয়ে উঁচু মনােবলসমৃদ্ধ শাসক, স্বদেশপ্রেমী সমরবিদ এবং স্বধর্মের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। সুলতান পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে তিনি যে পরিমাণ সচেতন ছিলেন। তার মতাে এমন যুগচাহিদা সচেতন ও জাত্যাভিমানী ব্যক্তিত্ব এদেশে খুব একটা দেখা যায়নি।
গােটা জীবন তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রাণপণে যুদ্ধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত ৪ মে ১৭৯৯ ঈসাব্দে শ্রীরঙ্গপত্তনামে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। তিনি ইংরেজদের দাসত্ব ও তাদের দয়া-করুণা নিয়ে বেঁচে থাকার ওপর মৃত্যুকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাঁর সেই বীরত্বব্যঞ্জক মন্তব্য ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল রয়েছে- শৃগালের মতাে একশাে বছর বেঁচে থাকার চেয়ে সিংহের মতাে একদিন বেঁচে থাকা উত্তম। টিপু সুলতানের শাহাদাতের মাধ্যমে অস্তমিত হয় স্বাধীনতার সূর্য।
আফসােসের বিষয় হলাে, রচনাবলি ও ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলির প্রচুর উপস্থিতি সত্ত্বেও ইংরেজি বা উরদু ভাষায় এমন কোনাে গ্রন্থ অদ্যাবধি আমাদের চোখে পড়েনি- যেখানে তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে তার দ্বীনি ও আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুন্নত প্রতিষ্ঠার নানামাত্রিক প্রয়াস এবং জিহাদের ময়দানে তার অসামান্য অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা রয়েছে। যে কারণে এই ঈমানদীপ্ত সম্রাট, দ্বীনঅন্তপ্রাণ মুজাহিদের ওপর একটি সত্যনিষ্ট জীবনীগ্রন্থের প্রয়ােজনীয়তা দীর্ঘ দিন যাবত অনুভব করছিলাম। এটি স্রেফ প্রয়ােজনই নয়, এটি আমাদের ওপর তার একপ্রকার অধিকারও বটে।
আল্লাহ তা’আলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি সম্পন্ন করার তাওফীক দিয়েছেন দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার গুণী সন্তান মৌলভী মুহাম্মদ ইলয়াস ভাটকালী নদভীকে । আমি শুরু থেকেই তাকে এ বিষয়ে কলম ধরতে উদ্বুদ্ধ করেছি, উৎসাহ যুগিয়েছি। লেখক নিজেই টিপু সুলতানের দেশের মানুষ। লেখকের জন্মস্থান হলাে ঐতিহাসিক নগরী ভাটকাল- যা দাক্ষিণাত্যের জাত্যাভিমানী চেতনার বাহক নগরী।
আশা করি, বইটির মাধ্যমে শহীদ টিপু সুলতানের ব্যক্তিত্ব ও অবদান সম্পর্কে ইতিহাসের পাতায় অনেক নতুন তথ্য ও জ্ঞানকথা সংযােজিত হবে।