“গল্পসমগ্র ৪র্থ খণ্ড” বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা:
বাংলা সাহিত্যে গল্পকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৯০৮-৫৬) আবির্ভাব ঘটে আকস্মিকভাবে। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে বিখ্যাত পত্রিকায় গল্প ছাপিয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, লেখা উন্নত মানের হলে নবীন লেখকও ওইসব পত্রিকায় ঠাঁই পান। তখন তিনি মাত্র বিএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র, বয়স বিশ বছর। কিন্তু এই আকস্মিকতা তাঁর লেখকসত্তাকে এমনভাবে জাগিয়ে দিল যে, পাঠ্যবইয়ে আর মনোযোগ থাকল না। লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে এমনভাবে মনোনিবেশ করলেন, নিজেই যার নাম দিয়েছেন ‘প্রাণান্তকর সাহিত্যসাধনা’। ফলে পরবর্তী সাত বছরের মধ্যে (১৯২৯-৩৬) এমনসব গল্প-উপন্যাস সৃষ্টি করলেন যা বাংলা সাহিত্যে তাঁর আসন পাকা করে দিল।
এ সময়েই তিনি আক্রান্ত হন মৃগীরোগে। জীবিকার জন্য লেখার ওপর নির্ভর করায় দারিদ্র্য হয়ে ওঠে তাঁর নিত্যসঙ্গী। ব্যাধি আর কর্মক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন আসক্তিতে। এসবের যৌথতায় অনিবার্য হয়ে ওঠে অকালমৃত্যু। বাংলা সাহিত্যে মনোবিশ্লেষণমূলক ও সমাজচেতনাধর্মী রচনার জন্য অনন্য তিনি। মাত্র ৪৮ বছরের জীবনে ২৮ বছরই তাঁর সৃষ্টির কাল। এ সময়ে লিখেছেন ২৭০টির বেশি ছোটগল্প, ৩৭টি উপন্যাস। আরো লিখেছেন কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, কিশোরতোষ গল্প-উপন্যাস, স্মৃতিমূলক গদ্য ও দিনলিপি। তাঁর গল্পসমগ্রকে আমরা ৪ খণ্ডে প্রকাশের পরিকল্পনা করেছি। এর চতুর্থ খণ্ডে সংকলিত হলো ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৬ কালখণ্ডের গল্পসমুদয়। সমকালীন সমাজসংকট ও শ্রেনিদ্বন্দ্ব ঋদ্ধ করেছে এ কালের গল্পসমষ্টিকে। সংকট উত্তরণের পথ হিসেবে এতে ব্যক্ত হয়েছে শ্রেণি-ঊর্ধ্ব সংগ্রামশীল মনোভঙ্গি।