“পদ্মা নদীর মাঝি” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
তৎকালীন পূর্ববাংলার নদীবেষ্টিত গ্রামীণ পটভূমিকায় রচিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস। জেলে ও মাঝিদের দুঃসাহসিক জীবনযাত্রা এ উপন্যাসের উপজীব্য। কেন্দ্রীয় চরিত্রেরা পদ্মাতীরের দারিদ্র্যপীড়িত গ্রাম কেতুপুরের মাঝি সম্প্রদায়। তাদের জীবন-জীবিকা এই পদ্মানদীতেই মাছধরা এবং মাঝিগিরি করা। সমস্ত বর্ষাকালটা ওরা অপরিসীম কষ্ট সহ্য করে মাছের জন্য পদ্মার বুকে চষে বেড়ায়। শীত মৌসুমে খেয়া পারাপার এবং লােকের মালামাল বহনের কাজ করে। তাই পদ্মা তাদের জননীর মতাে। কখনাে সে ভালােবাসে উজাড় করে দেয়, আবার কখনাে-বা সব ছিনিয়ে নিঃস্ব করে ছাড়ে। তারপরও পদ্মাই তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। পদ্মা যেমন তার এক তীর ভাঙে আর অন্য তীর গড়ে তােলে, কেতুপুরবাসীদের জীবনেও তেমনি ভাঙা-গড়ার নিত্য খেলা চলে। কেতুপুর থেকে ময়নাদ্বীপ এই ভাঙা-গড়ার ক্ষেত্র। কুবের-কপিলা-মালা-রাসুগণেশ-নকুল-বুড়া। পীতম মাঝি-ধনঞ্জয়-আমিনুদ্দিন—তারা সবাই এই বিশাল জীবননাট্যের একেকজন কুশীলব। অন্যদিকে রহস্যময়ী পদ্মার মতাে রহস্যময় চরিত্র হােসেন মিয়া। তিনিই যেন-বা তাদের ভাগ্যবিধাতা। তার ওপরেই নির্ভর করে। ঘুরপাক খায় কতগুলাে জীবন। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কুবের মাঝি। প্রকৃতপক্ষে তাকে কেন্দ্র করেই রূপায়িত হয়েছে এর কাহিনী। মাঝি-জেলেদের প্রতিনিধি কুবের। তার নেতৃত্বে জেলেরা নিজেদের জীবনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু কুবেরকে যাপন করতে হয় বিপর্যস্ত জীবন। ভাগ্যের অমােঘ পরিণতির শিকার হয়ে শেষপর্যন্ত কুবেরকেও আশ্রয় নিতে হয় হােসেন মিয়ার রহস্যময় ময়নাদ্বীপে, যেখানে কখনােই যেতে চায়নি সে।