লেখক আব্দুল মান্নান খান-এর জন্ম ১৯৪৯ সালে যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার পাঠান পাইকপাড়া গ্রামে। গ্রামের সেই পরিবেশ-প্রকৃতির মাঝে ছিল তাঁর নিবিড় চলাফেরা। গভীর ভালোবাসা জন্মেছিল ছুঁয়ে গিয়েছে সেই শৈশব-কৈশোরে। তারপর স্বাভাবিকভাবেই জীবন-জীবিকার তাগিদে সমস্ত ভঅলোবাসা ছেনে ফেলে তাঁকে একনি গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে চলে আসতে হয়েছিল। চলে আসেন ঠিকই, তবে তাঁর অন্তরটা পড়ে থেকেছে সেই গ্রামে, সেখানে তিনি সুযোগ পেলেই বার বার ছুটে যান। গিয়েছেন আর হৃদয়টাকে ক্ষত-বিক্ষত করে এনেছেন যখন দেখেছেন কেমন করে দিনে দিনে মরে যাচ্ছে সেই নদীটি যার পাড়ে কেটেছে তাঁর শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো। দেখেছেন কেমন করে নিধন হয়েছে গাছপালা আর পশুপাখি- কেমন করে শেষ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর রসের গুড়পাটালি। মাত্র ৪০-৫০ বছরের ব্যবধানে একেবারে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা লেখকের অন্তরে দাগ কেটেছে। যে নদীর ঢেউ দেখে লেখকের অন্তর কেঁপে যেত শৈশবে সে নদী একেবারে পায়ে হেঁটে পার হওয়ার এক অব্যক্ত বেদনা তাঁকে ব্যথিত করেছে এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ বইটিতে। যারা সেই গ্রাম দেখেনি তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা লেখকের এ বইটি আমাদের গ্রাম্য পরিবেশের একটা সময়ের সাক্ষ্য বহন করেছে নিঃসন্দেহে।
২০০০ সালে লেখকের প্রথম বই ১৯৭১ : এক সাধারণ লোকের কাহিনী ইউ পি এল থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি সুধী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কর্মজীবনে লেখক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন একজন কর্মকর্তা ছিলন। চাকুরির সুবাদে কেবল যে নিজের দেশটাকে ঘুরেফিরে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি তাই শুধু নয়- দেশের বাইরেও কিছু দেখার সুযোগ হয়েছে তাঁর। তাঁর চীন ভ্রমণের কাহিনী ড্রাগনের দেশে একখানা সুখপাঠ্য ভ্রমণ কাহিনী ছাড়ও বইটিতে সে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার তথ্যবহুল চিত্র পাওয়া যায়।