“মাইনী নদীর বাঁকে” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
প্রিয়জন হারানাের বেদনা যখন কুরে কুরে খায়, সমাজের চোখে দয়া আর করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকা যখন অসহ্য হয়ে ওঠে তখনই মানুষ পালাতে চায় চিরচেনা জগৎ থেকে। কেউ নিজেকে গুটিয়ে নেয় সমাজ ও সংসার থেকে। পরলােকের চিন্তায় নিমগ্ন থাকে দিনরাত। কেউবা জীবনের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে আত্মহননের পথ খুঁজে নেয়। কেউ মাদকাসক্ত হয়ে হিসেবনিকেশের জগক্টাকে বুড়াে আঙুল দেখায়। আর কেউ সবকিছু ছেড়েছুড়ে নতুন জীবন শুরু করে। কেউবা মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে মানুষের জীবন ও সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ এবং তাকে বিশ্লেষণ করা আমার অন্যতম প্রিয় শখ। আর দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে পাশ্চাত্যের মানুষের চিন্তা, কল্পনার সাথে আমাদের দেশের মানুষের চিন্তার পরিধির ফারাকগুলাে লেখায় তুলে আনতে চাই বারবার।
মানুষের জীবন ও প্রকৃতির অবিচ্ছিন্ন সত্তা নদী। মানবজীবনের সাথে বহমান নদীর সামঞ্জস্য এক প্রতীকী উদাহরণ হলেও নদীর শান্ত রূপ, প্রমত্ত উত্তাল রূপ, ঝড়াে রূপ সবই মানবজীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, তেমনি মানুষও তার এই রিপুগুলােকে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। জীবনে সম্পর্ক আর বন্ধনের তাৎপর্য ক’জনইবা বােঝে। বন্ধনে জড়িয়েও বন্ধনহারা পরিযায়ী পাখি হতে চায় কেউ । কেউ বন্ধনে জড়াতে চাইলেও সমাজের স্বীকৃতি মেলে না। জীবনের ছিন্ন সূত্রগুলাে মানুষভেদে ভিন্ন হয়। পরিকল্পনার বাইরে আসে জলােচ্ছ্বাস, সুনামি, সাইক্লোন, বন্যা- জীবনের স্বপ্নগুলাে মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু আবার স্বপ্ন দেখা মানুষগুলাে উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে চলে জীবনের টানাপড়েনে নকশিকাঁথার ফোঁড়ে জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে। মাইনী নদীর বাঁকে’ তেমনই একটি উপন্যাস, যেখানে পাহাড় আর সবুজ বনানীতে ঘেরা পরিবেশে মানুষের চাহিদা সামান্য, যেখানে হাত বাড়ালেই মেঘেরা টুপ করে কপােলে ভালােবাসার রেণু ছুঁইয়ে যায় আর হতাশায় নিমজ্জিত মানুষগুলাে আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।
এই উপন্যাসটি লেখার জন্য সর্বাগ্রে কৃতজ্ঞতা জানাতে হয় আমার প্রিয় লেখক রবিন কারকে। তাঁর লেখা ভারজিন রিভার সিরিজের গল্পগুলাে বহুদিন যাবৎ বারবার পড়ে মুগ্ধ হই। সেই থেকেই এই লেখাটির প্লট মাথায় আসে। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাসটি ভারজিন রিভারের ভাবানুবাদ বলা যেতে পারে।