“বঙ্গবন্ধু ও বিজয়ের গল্প” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
সিরাজগঞ্জ শহর দখলের পর আমরা শহরের পূর্বপ্রান্ত হােসেনপুর সিও অফিসে ক্যাম্প স্থাপন করি। শহরের নিয়ন্ত্রণ তিনটি মুক্তিযােদ্ধা দলের উপর ন্যস্ত হয়। আমাদের কমান্ডার আলী ইমাম তৌহিদ তিনি দক্ষ হাতে ক্যাম্প পরিচালনা করতে থাকেন। আমাদের সেসময় তেমন কাজ-কর্ম ছিল না। কখনও কখনও বাই রােটেশন ক্যাম্প পাহারার ডিউটি করতে হতাে।
বেশিরভাগ সময় আমরা ভাব নিয়ে শহরময় ঘুরে বেড়াতাম। ভাব মানে—এই তােমরা দেখ, আমরাই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু যার আহ্বানে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম তার অবর্তমানে সারাক্ষণ বিশাল শূন্যতাবােধ আমাদের প্রতিমুহূর্তে দংশন করতাে। রাতে ক্যাম্পে ফিরে আমরা আমাদের সেই শূন্যতা নিয়ে কথা বলতাম আর সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই শূন্যতা পূরণের আকুতি জানাতাম। কার ডাকে আমরা জীবন বাজি রেখেছিলাম? কে সে জন? কে সেই মহান পুরুষ? যিনি হ্যামিলনের বংশিবাদকের মতাে বাঁশির সুরে আমাদের ঘর থেকে টেনে বের করে আনলেন। আমরাও তাঁর বাঁশির সুরে সম্মােহিত হয়ে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে। তিনি আমাদের দাঁড় করিয়ে দিলেন মৃত্যুর মুখােমুখি। তিনি বললেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করে ছাড়বাে ইনশাল্লাহ।’ আমরাও হাসিমুখে তার নির্দেশ মেনে মরতে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি সেই, যিনি আমাদের হাজার বছরের শৃংখল ভেঙ্গে স্বাধীনতার স্বপ্নে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। কে তিনি? তিনি সেই—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।