“তোমাদের জন্য রূপকথা” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ
গল্প লেখার গল্প
যে সব বাবা-মা, তাঁদের বাচ্চাদের জন্যে এই বইটি কিনবেন কিংবা যারা বইটি নাড়াচাড়া করে দেখবেন শেষ পর্যন্ত কিনবেন না এই ভূমিকা তাঁদের জন্য। হঠাৎ রূপকথা লেখার ইচ্ছে কেন হল, প্রথম গল্প কি করে লিখলাম, সেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে। একদিন দুপুরে বাসায় ফিরে শুনি আমার বড় মেয়ে নােভা নিখোঁজ। ঘণ্টা দুই ধরে তাকে নাকি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ের মা খুব নার্ভাস ধরনের, সে যখন কেঁদে ফেলার চেষ্টা করছে তখন নােভাকে ভাঁড়ার ঘরের চৌকির নিচে আবিষ্কার করা হল। সে গভীর মনােযােগে এমন একটি বই পড়ছে, যা তার পড়ার কথা নয়। মেয়ের মা রাগী গলায় বলল, এই বই তুমি কেন পড়ছ ? এটা বড়দের একটা বাজে বই। জিনান্তিকে বলে রাখি যে বই সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সেটা আমারই লেখা একটা ভূত-প্রেত বিষয়ক বই।
মায়ের কঠিন শাসনে মেয়ে ফোপাতে-ফেঁপাতে বলল, ‘বাবা এই সব বাজে বই না লিখলেই পারে। আমাদের জন্যে লিখলেই পারে।’ তখনি ঠিক করলাম বাচ্চাদের জন্যে রূপকথা জাতীয় কিছু গল্প লিখব। | লিখতে গিয়ে দেখি কঠিন সমস্যা। রূপকথার গল্প মাথায় আসছেনা। রাজা-রানী দিয়ে ঠিকই শুরু করি, কিন্তু এগুতে পারি না। রাজা, রানী এবং রাজকন্যারা কেমন যেন দূরের মানুষ হয়ে থাকে অথচ আমি চাচ্ছি এমন রাজার গল্প লিখতে, যে আমাদের ঘরের মানুষ। লিখতে না পারার কষ্ট যারা লেখালেখি করেন না তাঁরা কখনাে জানবেন না। আমার কিছু ভালাে লাগে না, সারাক্ষণ রূপকথার গল্প নিয়ে ভাবি। লিখতে বসি, কয়েক লাইন লিখে পাতাটা ছিড়ে কুটি-কুটি করে ফেলি। আবার লিখি। আবার ছিড়ে ফেলি।
এই সময় মেজো মেয়ে জ্বরে পড়ল। আকাশ-পাতাল জুর। আমার মন খারাপ হয়ে গেল। শিশুদের কষ্ট আমি কখনাে সহ্য করতে পারি না, আর আমার এমনই ভাগ্য যে, আমার সামনেই শিশুরা সবচে বেশি কষ্ট পায়।
একরাতে মেয়েটার জ্বর একটু কমেছে। আমি তার মাথার কাছে বসে আছি। বিকেলের দিকে ছােটখাটো একটা ঝড় হবার কারণে ঘরে ইলেকট্রিসিটি নেই। মােমবাতি জ্বালানাে হয়েছে। চারদিকে অদ্ভুত আলাে-আঁধার। আমার মেয়ে বলল, একটা গল্প বল।আমি বললাম, কি গল্প ?