“সমাজ, সংস্কৃতি ও বিশ্বায়ন”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
বুশ-ব্লেয়ারের নেতৃত্বে ইরাকে আগ্রাসন : বিশ্বব্যবস্থায় এর প্রভাব
বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যতম বৃহৎ শক্তি যুক্তরাজ্য বিশ্ব। জনমতকে প্রত্যাখ্যান করে, যে জাতিসংঘ রচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রনায়কদের ভূমিকা ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তাকে অবহেলা ভরে উপেক্ষা করে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও বিধিবিধানকে পদদলিত করে যেভাবে ইরাকের মতাে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপর চড়াও হলাে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ, তা চিহ্নিত হয়ে থাকবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে অনৈতিক, অবৈধ এবং অন্যায় আগ্রাসন রূপে। এই আগ্রাসন বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলাের নিরাপত্তাবােধ নিশ্চিহ্ন হয়েছে। গত শতাব্দীর যে সব অর্জন মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে, তাদের অধিকাংশের মূল শিথিল হয়েছে। যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শ্রীবৃদ্ধিতে আটলান্টিকের দুই পাড়ের দুই মহান সমাজ ব্যবস্থা – ব্রিটেন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ী অবদান রেখেছে তাদেরই ক্ষমতাশ্রয়ী নেতৃবৃন্দের কল্যাণে গণতান্ত্রিক মূল্যবোেধ অবিশ্বাসের কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়েছে। মানবাধিকারের প্রত্যয় হয়েছে পর্যদস্ত। আইনের, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আইনের, ভিত্তিমূল নড়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতা প্রকট হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র আগ্রাসীদের কবলে চলে গেল অথচ ১৯১ সদস্যবিশিষ্ট রাষ্ট্রসংঘে যুদ্ধবিরতির কোন প্রস্তাব উত্থাপিত হলাে না। সবাই মিলে তাকিয়ে দেখল কিভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র একটু একটু করে স্বাধীনতা হারিয়ে প্রচ শক্তিমত্তার ছােবলে ছােবলে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ভালভাবে জানতেন যে, তাদের ইরাক আক্রমণ বৈধ নয়, নয় রীতিসিদ্ধ। তাছাড়া তাদের ইরাক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত সােচ্চার হয়ে উঠেছে।