বৃষ্টি-জলকাদা ভেঙে ইশাক আলী রায়হান সাহেবকে বললাে, স্যার, হিরাে হিরােইন তাে এখন নদীর ঘাটে। এই বৃষ্টিতে ওখানে গেছে কেন? তাতাে কিছু কয় নাই, আমারে খালি কইলাে, একটা নাও যােগাড় কইরা দ্যাও। একটা কথা কইমু স্যার?
কি?
আমগাে ছবির নাম তাে কৃষ্ণলীলা। ক্যামরাটা লইয়া যান। ঐ নদীর ঘাটেই আসল কৃষ্ণলীলা শুরু অইছে।
নৌকায় রাধার মতাে বসে আছে অলকা। খুব নড়াচড়া করছে বলে নৌকাটা এদিক ওদিক কাত হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড এক দুলুনি খেয়ে উল্টে যাওয়ার আগেই ঝপাস করে জলে পড়ে গেলাে অলকা আর অলীক। হাবুডুবু খেতে খেতে খলবল করে আবার ভেসে উঠলাে। অলীক অলকাকে প্রায় চিৎকার করেই বলছে, শাড়ির গিট খুইল্যা দাও, নইলে তােমার দুই পাও জড়াইয়া যাইবাে, সাঁতরাইতে পারবা না, শাড়ি খুইল্যা দাও। ডুব দিয়ে অলকা বােধহয় তাই করলাে, প্রথমবার পারে নি। শাড়ির গিট খুলতেই দম ফুরিয়ে গেছে। আবার ডুব দিয়ে শাড়ির গিট খুললাে। এবার সে অনেকটা মুক্ত। অনেক হালকা। কিন্তু খুব ক্লান্ত। সঁতরাতে পারছে না। অলীক টের পেয়ে অলকার সমস্ত শরীর তার বুকে নিয়ে চিত সাঁতার দিতে লাগলাে।
মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছেন রায়হান সাহেব। তুমুল বৃষ্টি। লাইট বসানাের জায়গা নেই। হাতের কাছে ক্যামেরা থেকে লাভ কী? কৃষ্ণলীলা’য় হুবহু এরকম একটা দৃশ্য আছে। রাধাকে বুকে নিয়ে কালীদহের মাঝ নদী থেকে কৃষ্ণ চিত সাঁতার দিয়ে পাড়ের দিকে এগােচ্ছে। রাধা যেন শুয়ে আছে কৃষ্ণের বুক জুড়ে। অলকা যেমন অলীকের বুকে এখন মাথা রেখে ভাসছে। হুবহু এইরকম। শুধু সেই কালীদহের জল ছিল স্ফটিকের মতাে স্বচ্ছ। আর এখানকার জল হলাে খুব ঘােলাটে। আহা, ঠিক এই কম্পােজিশন। এই রকমই স্রোত।
কারাে দিকে তাকাচ্ছেন না রায়হান সাহেব। যেন কখন ক্যামেরায় লুক রেখে ওদেরকে দেখছে। জলের সঙ্গে লড়াই করে করে অলকা আর অলীক অনেক কষ্টে পাড়ে এসে থামলাে। রায়হান সাহেব তখন খুব আবেগে শুটিং চলাকালে শট শেষে যেভাবে চিৎকার দেয়, ঠিক সেভাবেই বললাে, কাট ইট।