ভূমিকা
শুধু দরবেশরাই পারেন পুরোপুরি নির্মোহ হতে। তাই নিজের কবিতা বাছাইয়েঢর কাজ এত কঠিন। একটা সীমিত জায়াগায় কাদের ঠাঁই দোবো আর কাদেরই বা খারিজ করবো, এই দ্বিধা সারাক্ষণ নির্বাচককে দখল করে রাখে। ভালো-মন্দের বিচার করতে গিয়ে বিড়ম্বিত হতে হয় বারংবার। দুর্বলতার ফাঁক ফোকর দিয়ে ঢুকে পড়ে কিছু নিকৃষ্ট রচনা আর কোনো কোনো উৎকষ্ট লেখা বাদ পড়ে যায়। এ কারণেই এই বইয়ের কবিতা নির্বাচনে নিজের মতামতকে সম্পূর্ণ আমল না দিয়ে কোনো কোনো বিদগ্ধ কাব্যরসিকের পরামর্শ নিতে প্রলুব্ধ হয়েছি। আমার বন্ধু এবং নন্দিত কথাশিল্পী রশীদ করীম, যিনি সহযোগিতার ক্ষেত্রে বরাবরই উদার, কবিতা বাছাই করতে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।
আমার কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা একটু বেশি। এর ফলে যথাসম্ভব নির্দয়তা করার পরও পাণ্ডুলিপি স্থূলকায় হয়ে ওঠে। বরাদ্দ পৃষ্ঠাসংখ্যার দিকে নজর রেখে পাণ্ডুলিপির কার্শ্যতার প্রতি মনোযোগী। হতে হয়েছে। এই মুশকিল আসান করবার উদ্দেশ্য আমার প্রিয় অগ্রজ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শরণাপন্ন হই । কবিতা বলীর চূড়ান্ত বাছাইয়ের কাজ তাঁর হাতে সম্পাদিত হয়েছে বলে ব্যাপারটি আমার উদ্যোগ না নিলে এই বই হয়তো কলকাতার থেকে এত তাড়াতাড়ি প্রকাশ হতো না। বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রুফ সংশোধনের কাজ করেছেন তরুণ কবি ও গবেষক মাসুদুজ্জামান। এঁদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আরেকটি কথা। এই সংকলন গ্রন্থটি ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র তিলক পরাতে আমার রুচিতে বাধে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত সিরিজের মর্যাদার খাতিরে শেষ পর্যন্ত তরুণ প্রকাশক শ্রীসুধাংশুশেখর দে’র সিদ্ধান্তকেই মেনে নিয়েছি।
শামসুর রহমান