আমাদের স্কুলে কলেজে ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরে অনেক অনুষ্ঠান করা হয়। নানা রকম আয়োজনের মধ্যে থেকে আমরা আনন্দ উপভোগ করি। কিন্তু অনেকেই এসব অনুষ্ঠানের সঠিক ইতিহাস উপলদ্ধি করতে পারি না। শুধু আনুষ্ঠানিকতা দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বাধীনতাকে বোঝা সম্ভব না। এর জন্য প্রত্যেকেরই থাকতে হয় নিজেস্ব কৌতূহল ও পঠন-পাঠন। ইতিহাসের সঠিক জ্ঞান না থাকলে সারা জীবনই অন্যদের কথা―সেটা ভুল কিংবা সেটা সত্য হোক বিশ্বাস করে চলতে হয়।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দেশের একটি গৌরবময় ইতিহাস। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন-যৌবন ধন-মাল দিয়ে যুদ্ধ করে আমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ, লাল-সবুজের পতাকা এনে দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের যে ত্যাগ ও বীরত্ব তা আমরা কখনোই ভুলব না। তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও মর্যাদা সব সময়ই থাকতে হবে।
বিশিষ্ট শিশু-সাহিত্যিক ফারুক নেওয়াজের লেখা কিশোর গল্প ‘মাই নেম ইজ হিরুমিয়া’। একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর লেখা এ গল্পটি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের এত গল্প আর ঘটনা রয়েছে যে এসব লিখে শেষ করা যাবে না। আমরা এ যাবৎ যতগুলো গল্প, ছড়া, উপন্যাস, কবিতা পেয়েছি তা যথেষ্ট নয়। হিরুমিয়া মুক্তিযোদ্ধা হলেও তার মধ্যে কিছু অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করা যায়।
ঢাকার শহরে এখানে-সেখানে সে ডিগবাজি দিয়ে বেড়ায়। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না। পথচারী আর বাসের যাত্রীরা মুখ বাড়িয়ে তার কাণ্ড দেখে। তার হো হো করে হাসে, হেলপার টিপ্পনী কাটে। কিন্তু কিছুতে তার ডিগবাজি থামে না। লোকজন তাকে নানা প্রশ্ন করলেও সে প্রশ্নের উত্তর সে দেয় না। মুখ বুঝে সে ডিগবাজি দিয়ে যায়।
একসময় সে মুখ খোলে। সে জানায় মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে তাকে কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তার ঘরবাড়ি, পরিবার কত কিছু ধ্বংস করেছে হানাদার বাহিনী। সেই সব হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার-আলবদররা এখনো স্বাধীন দেশে ঘুরে বেড়ায়। তাই তাদের বিচারের দাবিতে সে এভাবে অনবরত ডিগবাজি দিয়ে চলছে!
বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৩ সালে। সে সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজও চলছিল। ইতিমধ্যে অনেকের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরো সুসংহত করতে এ গল্পটি আমাদের শিশু-কিশোরদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।