বাংলাদেশের সাহিত্যে হায়াৎ মামুদের পরিচিতি একাধিক কারণে পরিব্যাপ্ত। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার যে প্রমাণ তিনি গেঁথে রাখেন দেশের প্রগতিশীল অজস্র ও বহুমুখী কর্মপ্রণোদনায় স্বেচ্ছাশ্রমিক হওয়ার আন্তর্তাগিদে, তা হয়তো-বা একটি কারণ। কিন্তু এর বাইরে, সাহিত্যেরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর প্রয়াস তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভাবুক ও চিন্তক হিসেবে, বিরল প্রসাদগুণসম্পন্ন গদ্যকার হিসেবে, গবেষক, অনুবাদক, পরিশ্রমী সম্পাদক, শিশুসাহিত্যিক হিসেবে তাঁর অধিষ্ঠান তর্কাতীত। স্পষ্ট যে, শিশুসাহিত্য তাঁর একমাত্র ক্ষেত্র নয়, যদিও বাংলা একাডেমি পুরস্কার তিনি শিশুসাহিত্যেই লাভ করেছিলেন।
শিশুদের নিয়ে তাঁর ভাবনা যে কতখানি ধারাবাহিক তা তাঁর রচিত বিভিন্ন শিশু-কিশোরপাঠ্য জীবনী ও অনূদিত গল্প, এমনকি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’র গদ্য রূপায়ণেও প্রত্যক্ষ করা যাবে। বর্তমান গ্রন্থের রচনাসমূহ বিভিন্ন সময়ে নির্মিত, কিন্তু প্রসঙ্গ তাদের একমুখিন : শিশু ও শিশুসাহিত্য। বাঙালির শিশুসাহিত্য নিয়ে বর্ণনাত্মক জরিপ যেমন আছে, তেমনি বিশ্লেষণাত্মক রচনা ও রয়েছে আমাদের শিশুমনস্কতা, শিশুতোষ কবিতা ও ছড়া, কিশোরপাঠ্য অভিধান ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে।
সব কিছুর ভিতর থেকে ক্রমশ পরিস্ফুট হয়ে ওঠে আমাদের বর্তমান অবস্থার সার্বিক চিত্র। হায়াৎ মামুদের রচনার সামান্যলক্ষণই এই : বিশেষ থেকে নির্বিশেষে যাওয়া, প্রবল অন্বেষণে সত্যকে স্পর্শ করতে চাওয়া। প্রায় বিশ বছর আগে এ-বই যখন প্রথম রেরয় তখন সকলেরই দৃষ্টি কেড়েছিল।