শৈলসুনিবিড় আলমােড়ায় বসে বাংলা ১৩১০ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসে নিস্তব্ধ গিরিসম্রাটের অভ্রভেদী সংগীত শুনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, হে হিমাদ্রি দেবতাত্মা, শৈলে শৈলে আজিও তােমার অভেদাঙ্গ হরগৌরী আপনারে যেন বারম্বার। শৃঙ্গে শৃঙ্গে বিস্তারিয়া ধরিছেন বিচিত্র মুরতি। হিমাদ্রিশেখর নগাধিরাজকে মহাকবি কালিদাস তাঁর কাব্যে বার বার দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে উপসিত করেছেন। আর কালিদাসের ভাবশিষ্য একালের রবীন্দ্রনাথের কল্পনা হল,হিমশৃঙ্গ যেন কঠিনপ্রস্তরকলেবর মহান দরিদ্র রিক্ত আভরণহীন মহারুদ্র, যার অঙ্গে অঙ্গে পার্বতীলীলা : মৌনের চারপাশে যেন গীত, স্তব্ধকে ঘিরে চঞ্চলের রঙ্গনৃত্য। রিক্ত কঠিনের চরণপ্রান্তে যেমন শ্যামলশােভন কুসুমিত পল্লবের ছায়ারৌদ্র, গিরিশকে ঘিরে তেমনি পার্বতী মাধুরীচ্ছবি। হিমালয় তাই আজও বাংলা ভ্রমণসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ এবং মুখ্যতম বিষয় এযাবত হিমালয় বিষয়েই যত ভ্রমণ-অভিজ্ঞতামূলক বাংলা বই লিখিত ও প্রকাশিত হয়েছে, হিমালয়ব্যতিরিক্ত ভ্রমণসাহিত্যের সমগ্র পরিমাণের চেয়ে তা কম নয়। দুর্গমতা,নৈসর্গিক সৌন্দর্য, তীর্থ এবং রহস্যময়তা এই চতুর্বিধ আকর্ষণেই ভ্রমণস্থান পর্যটকপ্রিয় বা পর্যটনযােগ্য হয়ে থাকে। আর এই চারের সর্বোত্তম সমাবেশের নামই হিমালয়।