”মিডিয়া ও সাম্প্রদায়িকতা” বইয়ের ভুমিকা :
দুনিয়ার ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতা অনেক প্রাচীন প্রবণতা। প্রধানভাবে ধর্মকে কেন্দ্ৰ করে সাম্প্রদায়িকতার মতো সভ্যতাবিরোধী ঘটনা ঘটলেও, সাম্প্রদায়িকতা শুধু ধর্মকে ব্যবহার করেই ঘটেনি। সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে নানারকম সামাজিক ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান যুগে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটানোর নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অনেক সাম্প্রদায়িক ঘটনা ও উত্তেজনা সৃষ্টির অশুভ পাঁয়তারা এখন আমরা দেখছি । ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলে প্রধানভাবে সংবাদপত্রকে ব্যবহার করে শাসক ও শোষকগোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে সমাজে এ ধরনের অশান্তির অপচেষ্টা নানাভাবেই করত ।
কিন্তু সে সময়ের সংবাদপত্রের বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তা সফল হতে পারে নি। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ বলে প্রথম পাতায় একই সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিকরা, রাস্তায় মিছিল করেছেন পত্রিকার সম্পাদকরা। অথচ আজকের দিনে আমরা দেখি, কোনো কোনো গণমাধ্যম নিজেরাই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। মিডিয়ার জন্য এ এক দুঃখজনক অধ্যায় । এর বিরুদ্ধে বেশকিছু উদ্যোগও প্রতিফলিত হচ্ছে। সেই প্রতিফলনের মিছিলে গণমাধ্যম সাময়িকী নিরীক্ষা ‘মিডিয়া ও সাম্প্রদায়িকতা’ শিরোনামে একটি সংখ্যা প্রকাশ করেছিল । অনেকেই বিভিন্ন আলাপচারিতায় এ সংখ্যাটির প্রশংসা করেছেন । তাদের কেউ কেউ একে গ্রন্থিত রূপ দিতে পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শের আলোকেই আরো কিছু লেখা যুক্ত করে গ্রন্থটি প্রকাশ করা হলো।
গ্রন্থটিতে বিভিন্ন লেখক সাম্প্রদায়িকতাকে দেখেছেন নানানভাবে। এ মতামত লেখকদের একান্তই নিজস্ব। আশা করি, মিডিয়া ও সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি গণমাধ্যমের কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং এ সম্পর্কিত একটি বইয়ের অভাবও মোচন করবে।
মো. শাহ আলমগীর মহাপরিচালক
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট