“পোকামাকড়ের ঘরবসতি” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
পদ্মা নদীর মাঝিদের নিয়ে একবার বাংলা ভাষায় একটি উপন্যাস লেখা হয়েছিল। সেসব মাঝিদের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তাদের বংশধরেরা বেঁচে আছে। সারা বাংলাদেশেই, কেউ কেউ দক্ষিণাঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের নিয়েই লেখা এই উপন্যাস। নাফ নদীর তীরে ছােট্ট এক গ্রামের বুকে এই সব মানুষের বসতি। মানুষের, না পােকামাকড়ের? দৃশ্যমান বাস্তবতা তাে পােকামাকড়ের কথাই বলে। কিন্তু সেই ঘরবসতিতে আমরা তাে মানুষকেই দেখতে চাই। সাহসী, লড়াকু, স্বপ্নতাড়িত, প্রেমময়। মানুষ। পিষ্ট হতে হতে শেষে মাথা তুলে দাঁড়াবে, এমন মানুষ। জলের দাসত্ব নয়, জলের অধিপতি হিসেবেই বেঁচে থাকবে মানুষ। তাদের কুশলী শ্রমে রুপােলি মাছ আটকে যাবে জালের সুতােয়, স্বপ্নের মধ্যে জালের গুটি টুং-টাং বেজে উঠবে যেন অলৌকিক সঙ্গীত। সব জলের মানুষ দাঁড়াবে এসে এক আলােকিত মিছিলে-পুরােভাগের সাহসী মানুষটির চোখে ভর করবে স্বপ্নঘেরা এক ভূখণ্ডের মানচিত্র। হাঙরদের পরাভূত করে উঠে আসবে জলমগ্ন। মানুষের দল। না, এ উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ নয়। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেলিনা হােসেনের যােগসূত্রের সন্ধানে বেরােলে সামনে থাকবে দীর্ঘ পথ। তবু উভয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম সাদৃশ্য যেন রয়েছে। সেই সাদৃশ্যটি জীবনের প্রতি অঙ্গীকারের বিশ্বস্ততায়। যে মানুষ আমরা সবাই, শহরের, মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত জীবনের, তার বাইরের মানুষের জন্য লেখকের ভালােবাসা। ভালােবেসে সে মানুষকে বােঝার চেষ্টা, তার ঘরবসতিকে অন্যরকম করে। সাজিয়ে দেওয়ার সাহস।