দোসরা আগস্ট, উনিশশাে সাতচল্লিশ। আমি তখন আমার মামার বাড়ি লালগাঁওতে ছিলাম। কালা-লােভাসিং রেলস্টেশন থেকে লালগাঁওয়ের দূরত্ব প্রায় দেড় মাইল। এ গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্রাহ্মণরাই সংখ্যায় বেশি। তারপর ক্ষত্রিয়দের স্থান। মুসলমানদের সংখ্যা খুবই কম।
এখানে আমার মামার বাড়ি ‘গৌরগোঁসাই বাড়ি নামে সুপরিচিত। হাজার বছর আগে এঁদের পূর্বপুরুষেরা এই গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। শােনা যায় প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে তাঁরা অনেকদিন রাজত্ব করেছিলেন। তার চিহ্ন এখনও বর্তমান। লালগাঁওয়ের সবচাইতে উঁচু বাড়ি, পরিত্যক্ত প্রাসাদটিকে এখনও লােকে মহল’ নামে উল্লেখ করে থাকে। প্রাসাদটিকে দেখতে ঠিক প্রাচীনকালের কেল্লার মতাে।
প্রাসাদের পিছন দিকটায় পাথুরে টিলা। তারপর অনুর্বর বিস্তৃত জমিতে কাঁটাঘাসের জঙ্গল। মাঝে মাঝে শরবন। শরবনের মধ্যে যখন হাওয়া খেলতে থাকে, শরগাছের শুভ্র সুন্দর ফুলগুলাে যখন দুলতে থাকে তখন চোখ যেন জুড়িয়ে যায়। কখনও মনে হয় বুঝি এক ঝাঁক সাদা পায়রা পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে।