রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর-পরিবারে ৭ মে ১৮৬১ (২৫ বৈশাখ ১২৬৮) তারিখে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তাঁর বাবা আর মা সারদাদেবী। দেবেন্দ্রনাথের পনেরােজন পুত্রকন্যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন চতুর্দশ সন্তান। এই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রথম সৃষ্টি কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জন্মের প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে। তার আগে এই ঠাকুর-পরিবার কোথা থেকে কলকাতায় এলেন এবং এখানে কোথায় প্রথমে বসবাস শুরু করলেন তার কথা জানাই। পঞ্চানন কুশারি নামে এক পিরালি ব্রাহ্মণ যশােহর-খুলনার বারােপাড়া’ নামে এক গ্রাম ছেড়ে হুগলি নদীর তীরে গােবিন্দপুর গ্রামে চলে আসেন। সেটা সপ্তদশ শতকের গােড়ার দিকের কথা। সুতানটি, গােবিন্দপুর ও কলকাতা এই তিনটি গ্রাম ছিল বর্তমান কলকাতার মূল অংশ। তখনকার দিনে পিরালি ব্রাহ্মণেরা ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণদের ভেতরে অস্পৃশ্য। এই পিরালি’ কথাটি এল কোথা থেকে? হয়তাে কোনাে এক সুদূর অতীতে মুসলিম সংসর্গের (পির আলি) ফলে এরা একঘরে হয়ে পড়েছিলেন, ফলে এরা যশােহর-খুলনা অঞ্চলে একটি ছছাটো সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছিলেন। উন্নত ব্রাহ্মণশ্রেণি এদের সঙ্গে কোনােরকম সামাজিক সম্পর্ক রাখতেন। পঞ্চানন কুশারির পূর্বপুরুষ জগন্নাথ কুশারি পিরালি ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। ফলে এই কুশারি বংশও পিরালি হয়ে যায়। তােমরা একটু লক্ষ করলে দেখতে পাবে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যারা বউ হয়ে এসেছেন, তাদের অনেকেই যশােহর-খুলনার মেয়ে। কারণ এই অঞ্চলেই পিরালি সম্প্রদায়ের বাস বেশি।