এ জার্নি বাই লাইফ

৳ 400.00

লেখক সরকার আমিন
প্রকাশক বাতিঘর
আইএসবিএন
(ISBN)
9789848034385
ভাষা বাংলা
পৃষ্ঠার সংখ্যা ২০৮
সংস্কার 1st Published, 2019
দেশ বাংলাদেশ

“এ জার্নি বাই লাইফ” বইয়ের কথা:
হতাশার ভেষজ মেডিসিন যেন এই বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা। এই বই ব্যক্ত করেছে একটা জীবন-দর্শন। যেখানে আছে আনন্দ, বিষাদ, অসুখ, উপশম, জয়, পরাজয়। বইটা অদ্ভুত প্রচলিত অর্থে জীবনী না আবার জীবনীও। কখনো মনে হতে পারে দিনলিপি, ট্রাভেলগ, স্বগতোক্তি, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। সবকিছু মিলেমিশে যেন এক গদ্যককটেল। তাই পর্বগুলোর বিন্যাসে প্রচলিত পারম্পর্য খোঁজা অপ্রাসঙ্গিক।

বইটির কিছু অংশ পড়ুন :
‘আমি তোমাকে ভালবাসি’
মন কালো করে বসে আছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে। সাল? ১৯৮৮। ‘আমার কেহ নাই ভাব’ মনে। চারপাশে ফুর্তির শব্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। নানা অনুষ্ঠান। তুমি এলে। খুব সাদামাঠা একটা জামা তোমার পরনে। চোখে খানিকটা কাজল। হাতে গোলাপি কালারের রং-জ্বলা ব্যাগ। সহজ একটা মানুষ আমার সামনে। তোমাকে দেখে আমার ভেতর ভূমিকম্পের সংক্রমণ! এই অনাত্মীয় শহরে, এই অতিবেশি স্মার্ট নগরে, কেউ কাহারে না চিনে মর্মে মর্মে; ক্যাম্পাস জুড়ে, কে তুমি সহজিয়া হরিণী? আমার ভেতরে পটাপট ফুটতে লাগল শত লাল গোলাপ! সাইনোসাইটিস, থাইরয়েড আর অচিকিৎসপ্রায় বিষণ্যতায় আমি ভেতরে ভেতরে প্রতিদিন একটু একটু করে মারা যাচ্ছি। কবিতা লিখে লিখে যেন আত্মহত্যা ঠেকিয়ে রাখছি। এমনই ভীষণ বিষণ্য এক দিনে তোমার আগমন। আমার ক্লাসমেট নীলু বলল, ‘এ হচ্ছে শাহনাজ মুন্নী, কবিতা লেখে, তোমার সাথে পরিচিত হতে চায় আমিন।’ আমি তোমাকে খুব একটা পাত্তা দিলাম না। ‘ও’ বলে একটু কি হেসেছিলাম! মনে পড়ে না। তুমি সোসিওলজিতে পড়ো। তোমাকে বললাম, ‘আসো একদিন বাংলা বিভাগে। কথা হবো।’ যথারীতি তুমি বাংলা বিভাগে এলে। আমি নাকি সেদিনও তোমাকে এড়িয়ে গেছি। তুমি কঠিন রাগ করে নীলুর কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করলে। আমি নাকি অহংকারী। তুমি যদি জানতে মুন্নী, আমি তখন তোমাতে ডুবে আছি। আমার কল্পনাজুড়ে এক সহজ নারী। তুমি। আমাদের প্রথম পরিচয়ের দিনগুলোতে খানিকটা বাংলা সিনেমা হয়ে গেল। তারপর তোমার সাথে শুরু হলো আমার অপার বন্ধুত্ব। ‘মক্কার কালো পাথর ভেবে চুম্বন করেছি নারীর ঠোঁট, রমণীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুঁজেছি খোদার আরশ’ আমার সে সময়ের কবিতা। তুমি যে কেন সন্দেহ করলে না পাস্ট পারফেক্ট টেন্সের এই নারী কে? তুমি নয়তো অন্য কেউ! না, তুমি সহজিয়া মানুষ। সন্দেহ-টন্দেহ তোমাকে মানায় না। আঠারো বছর আমাদের বিয়ের। একসাথে থাকলাম ২৩ বছর। তুমি কখনো জটিলতা করোনি। চুম্বক, আমি লোহা। বেশি দূরে যেতে পারি না। বন্ধু তো হলে তুমি। বিয়ে কি করবে আমাকে? জানা দরকার। একদিন সন্ধ্যায় বললাম খুব জরুরি কথা আছে তোমার সাথে আমার। ‘বলো’। এখন না কাল বলব। তুমি পরের দিন উদ্বেগ নিয়ে আমার সাথে দেখা করলে। কী কথা আমার? একটা রিকশায় চড়ে বসলাম তোমাকে নিয়ে। তুমি অবাক। কোথায় যাচ্ছ? বললাম অপেক্ষা করো। রিকশা গিয়ে থামল লালবাগের কেল্লায়। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। দাঁড়ালাম গিয়ে কেল্লার ভেতরের বিশাল পুকুরটার পাড়ে। তুমি হতবাক। বুঝতে পারছ না। জরুরি কথা বলতে কেন লালবাগের দুর্গে আসতে হলো। পুকুরের পাড়ে ছোটো রেলিং। আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব শান্তভাবে বললাম… ‘মুন্নী, তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু। আমার জানা খুব দরকার, তুমি কি আমার সাথে সারাটাজীবন কাটাতে রাজি আছ?’ বিহ্বল তুমি। অস্পষ্ট একটু হাসি। খুব লাজুক ভঙ্গিতে বললে, ‘হ্যাঁ’। আমি বললাম, ও.কে। আমার জরুরি কথা শেষ। চলো ক্যাম্পাসে ফিরে যাই। রিকশায় করে ফিরে এলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরবর্তী জীবনে।

জন্ম ১৯৬৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পিএইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন ২০০৫ সালে। কবিতা, প্রবন্ধ ও অনুবাদ মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬। তিনি বাংলা একাডেমীতে উপপরিচালক পদে কাজ করছেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন →
বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ