বইটির ভূমিকার কিছু কথাঃ
ইন্দ্রনাথ রুদ্রকে আমি সৃষ্টি করেছিলাম আমার মনের আকাশে। সে এক কান্তিমান বীরপুরুষ, দুর্জয় সাহস আর ক্ষুরধার বুদ্ধি সম্বল করে অ্যাডভেঞ্চারের এমন সব পথে পাড়ি জমায় যেখানে শুধু প্রহেলিকার পাকচক্র আর মুখােশধারীদের নিগূঢ় চক্রান্ত, যেখানে মৃত্যু হেঁকে যাচ্ছে পদে পদে, যেখানে ছলনাময়ীদের নিপুণ প্রতারণা ঢেকে রেখে দেয় নিঠুর পতনকে। সেইখানে…শুধু সেইখানে সে দেখিয়ে দেয়, বাঙালি জাতি কতখানি আশ্চর্য হতে পারে—বুদ্ধির প্রখরতায়, শক্তির বিদ্যুৎ চমকে, দর্শনধারীর জৌলুসে। এই আবেগের মূলে আরও একটা কারণ ছিল বইকি। বাঙালি বিদ্বেষ যে কি বস্তু, তা আমাকে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে হয়েছিল অন্য প্রদেশে কাজ করার সময়ে।
দেশি বিদেশী অনেক গােয়েন্দা কাহিনী হজম করেছি বারাে বছর বয়স থেকে। যৌবনে পাড়ি জমিয়েছি দেশে দেশে কর্মসূত্রে, আসমুদ্রহিমাচল এই উপমহাদেশের প্রতিটি ধূলিকণায় যে কত রহস্য, কত কাহিনী, কত ইতিহাস লুকিয়ে আছে—তা উপলব্ধি করেছি। বঙ্গতনয় ইন্দ্রনাথকে কল্পনায় জাগ্রত করেছি। গল্প-উপন্যাসের পাতায় পাতায় বিচরণ করিয়েছি—উপকরণ পেয়েছি দৈনিক আর সাময়িক পত্রিকা, বিজ্ঞান ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মহল থেকে—যে সবের নাম করা যাবে না। জিরাে জিরাে গজানন, ফাদার ঘনশ্যাম, রাজা কঙ্ক, বিদ্রোহী বর্মন, গােয়েন্দানি নারায়ণী—এরাও আমার কলম থেকে বেরিয়েছে এক-এক রকম সৃষ্টির তাগিদে। কিন্তু, আজ এই বৃদ্ধ বয়সে মনে হচ্ছে, ইন্দ্রনাথই আমার পরম প্রিয়—কারণ বােধহয় সে আমার মনের প্রতিচ্ছবি।