প্রখ্যাত লেখকদের মূল বই অবিকল পাইরেটেড করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের বাজারজাত করার কাহিনি অনেকেরই জানা। তবে গ্রামীণ একজন গীতিকারের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটতে পারে, সেটা নিশ্চয়ই সকলের ধারণা/কল্পনারও বাইরে। যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তিনি প্রতাপ রঞ্জন তালুকদার। নারীসংগীত রচনায়, বিশেষত ধামাইল ও সূর্যব্রতসংগীতের গীতিকার হিসেবে হাওরাঞ্চলে তাঁর পরিচিতি আকাশ-ছোঁয়া। বৈষ্ণব মতাদর্শী সাধক রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থের পরেই ধামাইলগানের ক্ষেত্রে তাঁর নাম অগ্রগণ্য। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাধারমণের চেয়েও নারীদের কাছে প্রতাপের গান বেশি জনপ্রিয়। সম্ভবত সে-কারণেই তাঁর রচিত পঁচাশিটি গানের সমন্বয়ে প্রকাশিত একটা পুস্তিকা প্রতাপের জীবদ্দশাতেই দেড় লাখেরও বেশি বিক্রি হয়েছে। ধামাইল সংগীত নামের এ পুস্তিকাই ঢাকা, সিলেট এবং সুনামগঞ্জ থেকে খ্যাত-অখ্যাত, প্রতিষ্ঠিত-অপ্রতিষ্ঠিত একাধিক প্রকাশক/বই বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। অনেক বেনামি প্রকাশকও গীতিকারের পরিবারের কোনও ধরনের অনুমতি না নিয়ে পুস্তিকাটি প্রকাশ করেছে। এ-পর্যন্ত পুস্তিকার কয়েক লাখ কপি বিক্রি হওয়ার বিষয়টি গ্রামীণ নারীদের কাছে প্রতাপের একতরফা জনপ্রিয়তার বিষয়ই জানান দেয়। এমনকী নারীদের কাছে প্রতাপের গান ‘প্রতাপবান্ধা’ অভিধায় আলাদাভাবে সুপরিচিতও। গ্রামীণ পরিমণ্ডলে প্রতাপ রঞ্জন তালুকদারের গানের যে তুমুল জনপ্রিয়তা, ঠিক এর উলটো চিত্র শহুরে সমাজ-সংস্কৃতিতে। এখানে প্রতাপ অনেকটাই অচেনা, অজানা ও অপরিচিত একজন গীতিকার। গ্রামীণ নারীদের সংগীত-পরিবেশনায় যেখানে প্রতাপের রচিত গানের প্রতাপশালী অবস্থান, সেখানে শহুরে শিল্পীদের কাছে প্রতাপ যেন দূর আকাশের কোনও তারা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রতাপের লেখা বাছাইকৃত বিরাশিটি গান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে প্রতাপবান্ধা : প্রতাপ রঞ্জন তালুকদারের নির্বাচিত গান। এখন, শহুরে নাগারিকতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামাঞ্চলের প্রখ্যাত এক সাধকের গানগুলো পাঠক গ্রহণ করলেই হলো।