প্রেমে পড়া মানে এমন এক ধর্ম তৈরি করা, যার ঈশ্বর হবে নশ্বরÑ ভ্যালেরি যখন এই কথা বলেন তখন আমার মন তাতে সায় দেয় না বরং এক অবিনশ্বর ঈশ্বর সৃষ্টির জন্যে আমার প্রণিপাত। প্রেমের চধৎধনষব রহস্যময় বুদ্ধির বিবেচনা থেকে দূরে আবেগময় পৃথিবী। পাস্কাল মনে করেন, প্রকৃতি হচ্ছে এক অসীম পরিমণ্ডল যার কেন্দ্র আছে সর্বত্রই কিন্তু পরিধি নেই কোথাও বরং আমি এই বক্তব্যের সহগামী হব প্রেমের পরিধি নেই কোনো। বোর্হেস যেমন ভাবেন বিশ্বের ইতিহাস হচ্ছে রূপকের ইতিহাস, আর আমি ভাবি প্রত্যেক প্রেমিক এই রূপকের সাহায্যে একেকটি অধ্যায় রচনা করতে চায়। এই প্রেমের অধ্যায় রচনার জন্য, হৃদয়ের অসীম আকুতি প্রকাশের জন্য যেসব মাধ্যম ব্যবহৃত হয় তার একটি হচ্ছে পত্র বা চিঠি। চিঠির একটা ধ্রুপদি ঐতিহ্য আছে, যা প্রযুক্তির তৎপরতায় হারিয়ে যেতে উদ্যত। কিন্তু এই ধ্রুপদি মাধ্যমটি আমার বিবেচনায় প্রেম প্রকাশের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। এই বিষয়টিকে পরিচর্যা ও লালন জরুরি। মধুসূদন, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের চিঠিগুলো চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। দুনিয়ার বিখ্যাত মানুষের চিঠি তা প্রেমের হোক কিংবা যুদ্ধের তা নিশ্চয়ই বিশ্ব ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। হৃদয়ের অভিব্যক্তি আর্তি আবেগের স্ফুরণ চিঠিতে ছাড়া আর কোথায় প্রকাশ করা যায়? টেলিগ্রাম, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাকার আধুনিক প্রকল্পে কি অকৃপণ উচ্ছ্বাস-আবেগ ঢেলে দেয়া সম্ভব? ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটি চিঠিতে যত অনায়াসে উচ্চারণ করা যায়, কোনো ফেসবুক-মোবাইলে কিংবা সরাসরি সেই কথাটি কি সহজে বলা চলে? আমি মনে করি ডাকহরকরার দিন হয়তো অবসিত হয়ে আসবে কিন্তু চিঠির গুরুত্ব থেকে যাবে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব অবধি। চিরন্তন ধ্রুপদি প্রয়োজনীয় মাধ্যমটিকে সচল রাখতে, আমার হৃদয়ের শিল্পীত বিশ্বস্ত উচ্চারণকে জায়গা করে দিতে এই পত্র লেখা প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করি, যা প্রয়োজনে লাগতে পারে পৃথিবীর সব প্রেমিকের।