সংস্কৃতির প্রাণশক্তি নিহিত থাকে এর সুনম্যতার মধ্যে। এটি একটি প্রবাহমান নদীর মতো। নানান জনপদের নানান উপসঙ্গ মিলিয়েই এর অঙ্গসৌষ্ঠব্য লাভ ঘটে এবং অনবরত এর সংকরায়ন ঘটতে থাকে। যখন এটি সুনম্যতা পরিহার করতে চায়; প্রগতির পথ পরিহার করে; বিশ্ববাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে একটি নির্দিষ্ট ভ‚গোলে আবদ্ধ হয়, তখন এর দীর্ঘ দিনের লালিত সংস্কারও পরিণত হয় কুসংস্কারে। নিয়ম পরিণত হয় নিপীড়নে। আবার বিশ্বনাগরিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল হয়ে বাইরের সংস্কৃতির উপকরণ গ্রহণ করতে গিয়ে যদি নিজেরটাই হারিয়ে যায়, তবে তো আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি হয়; ‘নিজ’ পরিণত হয় ‘অপর’- এ। সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো হয় লণ্ডভণ্ড; মানুষ হয় বিভ্রান্ত। সংস্কৃতি বাঁচেই অবিরাম দেওয়া-নেওয়া প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, দ্বিরালাপের মধ্য দিয়ে। এই দ্বিরালাপের সময় কোন পক্ষ যদি অন্য পক্ষের ‘অপরায়ন’ ঘটাতে চায়, তবে তাকে প্রতিপ্রপঞ্চ দিয়েই মোকাবেলা করতে হয়, গায়ের জোরে নয়। অস্ত্র শরীরকে আঘাত করে, পরাস্ত করে। কিন্তু প্রপঞ্চ মনস্তত্ত¡কে শিকল পরায়; স্বতন্ত্র চিন্তাকাঠামোকে বেঁধে ফেলে। প্রপঞ্চের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পেশিশক্তি নিয়ে নামলে সেখানে পরাজয় দুর্লঙ্ঘনীয় হয়ে ওঠে। এমনই এক পরাজয়ের কাহিনী নাইজেরিয়ার সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবে বিধৃত করেছেন তাঁর সবকিছু ভেঙেচুরে যায় উপন্যাসে। উপন্যাসের মূল চরিত্র ওকোনকো ঔপনিবেশিকদের প্রতাপ-লালিত প্রপঞ্চের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে গায়ে-গতরে। এই যুদ্ধে সৃজনশীল চিন্তা নয়, বরং তাকে আজীবন নিয়ন্ত্রণ করেছে তার ক্রোধ, ঘৃণা, অহংকার ও ক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত সে পরাস্ত হয়েছে; চরম অপমানবোধে আত্মহত্যা করেছে।