“পুরোনো বাংলা গদ্য” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
বাংলা গদ্যের বিকাশ সাধারণত গণ্য করা হয় উনিশ শতকের প্রথম থেকে। তার আগে বাংলা গদ্যের যেসব নিদর্শনের কথা জানা ছিল, তা অবজ্ঞাত হয়েছিল দুই কারণে : এসব উদাহরণ ধারাবাহিক নয়, বিচ্ছিন্ন, আর এগুলাে মূলত দলিল-দস্তাবেজ, ভাবের গদ্য নয়। তা ছাড়া মনে করা হয়েছিল যে, গদ্যের আবির্ভাবের জন্য যে-তত্ত্বজ্ঞান ও যুক্তিবােধ এবং যে-পরিশীলন ও মননশীলতা থাকতে হয়, পাশ্চাত্য প্রভাবের আগে আমাদের দেশে তার বিকাশ ঘটা সম্ভবপর ছিল না।
পুরােনাে বাংলা গদ্যের জ্ঞাত নমুনার সঙ্গে কিছু অজ্ঞাতপূর্ব উপকরণ উদ্ধার করে এই বইতে আনিসুজ্জামান দেখিয়েছেন যে, ষােড়শ শতাব্দী থেকে বাংলা গদ্যের—কাজের গদ্যের এবং ভাবের গদ্যের— একটা নিজস্ব ধারা গড়ে উঠেছিল। প্রথমে দেখা দিয়েছিল পদ্যের মধ্যে গদ্য, তারপর সূত্রাকার রচনা। পরে যে-রীতি বিকাশ লাভ করেছিল, তা ছিল সরল, প্রকাশক্ষম ও বিচিত্র।
ধর্মপুস্তক ও আইনগ্রন্থের অনুবাদ এবং ভাষাশিক্ষার বইপত্রে বিদেশি লেখকদের হাতে গড়ে ওঠে কৃত্রিম এক গদ্যরীতি। পরের ধাপে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতেরা বাংলা গদ্যরচনায় প্রবৃত্ত হন নতুন করে। নতুন দিনের সমারােহ সহজেই ভুলিয়ে দেয় পুরােনােকে।
সেই বিস্মৃত বাংলা গদ্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এই বইতে আনিসুজ্জামান বাংলা গদ্যের ইতিহাস নতুন করে লেখার প্রয়াস পেয়েছেন।