আবদুশ শাকুরের বিপত্তিকর আরবি-ফারসি-উর্দ শিক্ষা এবং আপত্তিকর অকালবিবাহ, দুটিকেই চলমান বর্তমানকালে স্বাভাবিকভাবেই নিদারুণ কণ্টকময় মনে হয়েছিল তার। অথচ এখন অতিবাহিত অতীতকালে তাকালে কাটা আর দেখতেই পান না তিনি, চোখে পড়ে কেবলি গােলাপ। কী রকম? প্রথমটির ফসলউর্দু-ফার্সি-আরবি ভাষাগুলি তার বােধের এবং স্ববিশ্বাসের শক্তি বাড়িয়েছে অপরিমেয় পরিমাণে। দ্বিতীয়টির উপহার, স্বশিক্ষিতা কাজিন লায়লা শাকুরের স্বরচিত অনস্তিত্ব আবদুশ শাকুরের অস্তিত্ব ঘােষণায় অমূল্য অবদান রেখেছে। গােলাপে কাঁটা থাকে কথাটা শুনতে শুনতে পূর্ণসত্যটা ভুলেই থাকে সকলে। মনে রাখলেও রাখে কেবল কম গুরুত্বপূর্ণ অর্ধেক। সেজন্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অর্ধেকের স্মারকস্বরূপই তার জীবনস্মৃতির শিরােনাম কাটাতে গােলাপও থাকে। গ্রন্থটির এই দ্বিতীয় পর্বটিতে ফিরে দেখা জীবনের পথগুলি অধিক বঙ্কিম বিধায় এটি উৎসর্গিত হয়েছে লেখকের বিসর্পিত অতীতের প্রতি। তবে প্রাসঙ্গিক বিধায়, রবীন্দ্রবাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ উচ্চারণ করেছেন এই জীবন স্মৃতিচারী : ‘জীবনের স্মৃতি জীবনের ইতিহাস নহে—তাহা কোন্-এক অদৃশ্য চিত্রকরের স্বহস্তের রচনা। তাহাতে নানা জায়গায় যে নানা রঙ পড়িয়াছে তাহা বাহিরের প্রতিবিম্ব নহে-সে-রঙ তাহার নিজের ভাণ্ডারের, সে-রঙ তাহাকে নিজের রসে গুলিয়া লইতে হইয়াছে। সুতরাং পটের উপর যে-ছাপ পড়িয়াছে তাহা আদালতে। সাক্ষ্য দিবার কাজে লাগিবে না।