রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যেমন অসীম বেদনাজগত, প্রমথ চৌধুরীর যেমন গভীর উপলব্ধিজগত, আবদুশ শাকুরের তেমনি ব্যাপক চিন্তাজগত। তার সুতীক্ষ্ণ ছুরির মতাে শাণিত চিন্তার আঘাত পাঠককে পদে পদে আহত করে, জাগ্রত করে, আলােকিত করে এবং এভাবে নিয়ে যায় নতুন এক দীপিত ভুবনে। এই লেখকের রচনামাত্রই বলে দেয় যে তার পড়াশােনা ব্যাপক ও গভীর এবং মনন অনন্তর তৎপর। ক্ষুরধার ধীশক্তির কারণে তিনি পারিপার্শ্বিক পৃথিবীকে দৃষ্টিপাতমাত্র নিজের ভেতর আত্মসাৎ করতে পারেন। আবদুশ শাকুরের শব্দের সজাগ ও গতিময়, চিন্তাপ্রক্রিয়া আধুনিক। বৈদগ্ধ্য তার এক অমূল্য বৈভব। এই বৈদগ্ধ্য মেধা আর প্রতিভার সমবায়ে তাঁর রচনাকে এমন এক পরিশীলিত শ্ৰী এবং উপভােগ্যতা দিয়েছে যা কেবল চিরায়ত বাংলাসাহিত্যেই পাওয়া যায়। যুগপৎ সৃজনশীল ও মননশীল এই রচনাবলীর প্রতিটি বাক্য পরিশীলিত, আলােকিত এবং শব্দে শব্দে উপভােগ্য। তাঁর গল্পে বৈঠকী আমেজ, উপন্যাসে চেতনার উন্মেষ এবং রচনার সর্বাঙ্গে সুস্মিত কৌতুকের স্বাদ। রম্যরচনার ক্ষেত্রে আবদুশ শাকুর একটি সম্পন্ন ধারার প্রবর্তক। প্যারীচাদ-কালীপ্রসন্ন আটপৌরে জীবন উপহার দিয়েছেন চটুল কৌতুকপ্রসূত তরল রসের ভাণ্ডে। বঙ্কিমচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথ-প্রমথ-শরৎচন্দ্র ভাব ও রূপের জগত উপহার দিয়েছেন উজ্জ্বল শুভ্র হাস্য- আলােকিত আধারে। মুজতবা আলী অন্তরঙ্গ রচনা উপহার দিয়েছেন বিরামহীন মশকরার রুচিঋদ্ধ রেকাবিতে। শাকুরের উপহারটা একটু আলাদা। টেনশানশাসিত মধ্যবিত্ত জীবনের স্বরচিত অসহায়তাকে তিনি তুলে ধরেছেন রসপণ্ডিতের ভাষায়। কৌতুকাধারিত বাংলাসাহিত্যের ধারায় এ এক পৃথক পদপাত ।