“ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাকাতের বিধান”বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
যাকাতের ওপর বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় মৌলিক এবং প্রাসঙ্গিক ছােট বড় অসংখ্য গ্রন্থ রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। এই বিষয়ের ওপর বাংলায় মৌলিক রচনা ও অনুবাদ গ্রন্থও কম নয়। কিন্তু আধুনিক যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে যাকাতের মাসায়েলগুলাে বিন্যাস করার প্রয়ােজনীয়তা ছিল তীব্র। এই প্রয়ােজনটা মেটানাে সাধারণ কোনাে আলেমের পক্ষে বেশ জটিল একটি বিষয়। আলহামদুলিল্লাহ! আধুনিক যুগের সমস্যা সমাধানে বর্তমান সময়ে তাজদীদী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন মুফতীয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.)-এর সুযােগ্য সাহেবজাদা, পাকিস্তানের শরয়ী আদালতের সাবেক চীফ জাস্টিস আল্লামা মুফতী তাকী উসমানী (দা.বা.)। তাঁর কলমে ইসলামের সমসাময়িক তাবৎ কঠিন ও জটিল সমস্যাগুলাের দিকনির্দেশনা পেয়ে মুসলিম উম্মাহ এইসব সমাধান থেকে ইসলামের সত্য-সঠিক পথের ওপর আমল করার সুযােগ লাভ করছে।
‘ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাকাতের বিধান’ বইটি আল্লামা মুফতী তাকী উসমানীর যাকাতের ওপর গবেষণালব্ধ স্বতন্ত্র তিনটি কার্যক্রমের বাংলা রূপান্তর। যাকাতের আধুনিক মাসায়েল’ নামক লেখাটি নেয়া হয়েছে ‘ফেকহী মাকালাত’ তৃতীয় খণ্ড থেকে। আর ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের যাকাতের বিধান প্রথম ও দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ লেখা দু’টো নেয়া হয়েছে ‘ফেকহী মাকালাত’ দ্বিতীয় খণ্ড থেকে।
বর্তমান যুগের মানুষ ইসলামের বিধানগুলাে সহজ ও সংক্ষেপ আকারে জানতেই বেশ আগ্রহী। যাকাতের আধুনিক মাসায়েলের আওতায় আল্লামা তাকী উসমানী অতি সংক্ষেপে অথচ পূর্ণাঙ্গরূপে যাকাতের মাসায়েলগুলাে মুসলমানদের সামনে তুলে ধরেছেন। একজন মুসলমানের পথ চলার জন্য এটি একটি গাইড লাইন হিসেবে কাজ করতে সক্ষম বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
‘ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের যাকাতের বিধান’ শিরােনামে প্রথম ও দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে অন্য দু’টো লেখা মূলত: পাকিস্তান সরকার ১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে যাকাত ও উশর অর্ডিন্যান্স’ জারি করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাকাত উসূলের যে ডিগ্রি জারি করে তারই প্রেক্ষিতে দুই অনুচ্ছেদে এই লেখাটি তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখেন। এতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাকাত আদায়ে জারিকৃত অর্ডিন্যান্সের ত্রুটিগুলাে তুলে ধরে তার সমাধান বাতলে দেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের যাকাত উসূলের বৈধতার যৌক্তিক তথ্য প্রমাণ তার লেখায় তুলে ধরেছেন। আমাদের দেশেও যেহেতু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত উসূলের একটি বিধান চালু রয়েছে; সুতরাং এই দু’টো লেখা আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাকাত উসূলের ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের বলে আমার ধারণা। তাই এই দুটো লেখাও যাকাত বিষয়ে এদেশীয় সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযােজ্য হবে।
মােটকথা এই বইটিতে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাকাতের প্রয়ােজনীয় সব বিধানেরই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাকাত বিষয়ে অসংখ্য বই মার্কেটে থাকলেও এটির প্রয়ােজনীয়তা ছিল খুবই তীব্র। কারণ এই আঙ্গিকে লেখা কোনাে বই এখনাে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয় নাই।
বইটির আগাগােড়া সম্পাদনা করে দিয়েছেন মালিবাগ জামিয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল, বহুগ্রন্থ প্রণেতা, সফল অনুবাদক, আমার বড় ভাই মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া। তার শক্তহাতে সম্পদনার ফলেই বইটি ত্রুটিমুক্ত হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জাযায়ে খায়ের দিন।
বইটি অনুবাদের ক্ষেত্রে ত্রুটিমুক্তির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভুলত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক। প্রুফ সম্পাদনার ক্ষেত্রেও সতর্কতার অভাব ছিল না। তথাপি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভুলত্রুটি থেকেই যেতে পারে। পাঠক সমাজ রাহনুমায়ী করলে পরবর্তী সংস্করণে এগুলাে শােধরে নেয়ার অঙ্গীকার থাকল।
বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেকের সহযােগিতাই ছিল একেবারে আন্তরিকতাপূর্ণ। নাম উল্লেখ করে আমি তাদের খাটো করতে চাই না। তবে নাদিয়া বুক কর্ণারের সত্ত্বাধিকারী বন্ধুবর নাজমুল হায়দার-এর নাম উল্লেখ না করলেই নয়। তার একান্ত সহযােগিতার কারণেই বইটি পাঠক সমাজের সামনে হাজির করা সম্ভব হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাকে জাযায়ে খায়ের দিন।
পরিশেষে বইটির দ্বারা পাঠক সমাজ সামান্য উপকৃত হলেও আমাদের শ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক-সহীহ পথে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!