“কেয়ামতের আলামত” বইটির প্রথম অংশের লেখাঃ
ইতিহাসের শুরু থেকে মানুষ পর্বতরাজির মহিমা ও আকাশমার্গের বিশালতা উপলব্ধি করে এসেছে। তাদের পর্যবেক্ষণের ধারা ও প্রণালী ছিল আদিম ও অর্বাচীন; তাই তারা এদের অবিনশ্বর ভাবত। এই ভাবধারার অনুবর্তনে গ্রীসের বস্তুবাদী দর্শন এবং সুমেরিয়া ও মিশরের সর্বেশ্বরবাদী ধর্মের প্রবর্তন হয়।
কোরআন আমাদের জানায় যে, যারা এসব মতবাদে বিশ্বাসী তারা পথভ্রষ্ট। কোরআনে উদ্ভাসিত অন্যতম সত্য এই যে, বিশ্বচরাচর পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট এবং একদিন এর অবসান অবশ্যম্ভাবী। সেই সাথে মানবজাতি এবং সমগ্র জীবজগতেরও পরিসমাপ্তি ঘটবে। এই পরিকল্পিত বিশ্ব যা বহুকাল থেকে নিখুঁতভাবে চলে এসেছে, তা একজন স্রষ্টার সৃষ্টি এবং তারই হুকুমে তারই নির্দেশিত সময়ে এসবই বিনাশপ্রাপ্ত হবে। | যে নির্দিষ্ট ক্ষণে অনন্ত বিশ্ব ও এর জীবকূল-জীবাণু থেকে মানব, তারকালােক ও ছায়াপথ বিলীন হবে, কোরআনে তাকে সময় বলা হয়েছে। এই সময় কোন কার্য নির্ঘন্ট নয়; বরঞ্চ একটি সুনির্দিষ্ট ক্ষণ যখন সমগ্র দুনিয়া নিঃশেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
অখিল বিশ্বের ধ্বংসপ্রাপ্তির সংবাদের পাশাপাশি কোরআন এ ঘটনার। বিস্তৃত বিবরণও প্রদান করেঃ
“যখন নভােমন্ডল বিদীর্ণ হবে,” “বিক্ষুব্ধ সমুদ্রেরা যখন একে অপরের উপর ঝাপিয়ে পড়বে”, “পর্বতমালা যখন চূর্ণবিচূর্ণ হবে”, “সূর্য যখন অন্ধকারে ছেয়ে যাবে”,……
সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে মানুষের মনে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হবে। বিশেষ জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, সে অবস্থার হাত থেকে কোন নিষ্কৃতি নেই, পালাবার কোন পথ নেই। এসব বিবরণ থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌছাই যে, ক্রান্তিলগ্নের সেই পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে, পৃথিবী এর আগে কখনও তেমন অবস্থার মুখােমুখি হয়নি। সেসব ভয়াবহতার বিবরণ আমাদের অন্য গ্রন্থদ্বয়, পুনরুত্থানের দিন ও মৃত্যু, পুনরুত্থান ও নরক-এ লিপিবদ্ধ আছে। কেয়ামতের আসন্নকালে যেসব ঘটনা ঘটবে- তাই বক্ষ্যমান পুস্তকের আলােচ্য বিষয়।