আশুতোষ মুখোপাধ‌্যায়

৳ 250.00

দীনেশচন্দ্র সেন বিরচিত ‘আশুতোষ-স্মৃতিকথা’ শুধুই ভারতীয় রেনেসাঁসের অন‌্যতম শ্রেষ্ঠ এক মনীষীর প্রামাণ‌্য জীবন-চরিতমাত্র নয়, বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশের এক বিশ্বস্ত ইতিবৃত্তও। প্রসিদ্ধ গণিতজ্ঞ, আইনজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদ, স‌্যার আশুতোষ মুখোপাধ‌্যায় নিজে সাহিত‌্যিক ছিলেন না, কিন্তু বাংলা ভাষা ও সাহিত‌্যের বিকাশের ­­­ইতিহাসে যে ভূমিকা তিনি গ্রহণ করেছিলেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কলকাতা বিশ্ববিদ‌্যালয়ে বাংলা তথা আধুনিক ভারতীয় ভাষা-সাহিত‌্য চর্চার ব‌্যবস্থা হয় তাঁরই উদ‌্যোগে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘জাতীয় সাহিত‌্য’ নামক প্রবন্ধ সংকলন তাঁর সাহিত‌্যচিন্তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। কিন্তু গণিতজ্ঞ, আইনজ্ঞ কিংবা শিক্ষাবিদ আশুতোষ ছাড়াও আর এক আশুতোষের খোঁজ মিলবে এ-বইয়ে। নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব‌্যাপৃত থেকেও দেশের সঙ্গে নানাসূত্রে জড়িত ছিলেন এই মহাপ্রাণ মানুষটি। পরোপকার-ব্রত ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। আপাত কাঠিন‌্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষ আশুতোষের সেই কোমল হৃদয়কে উন্মোচিত করে এক ভিন্ন মাত্রায়।

(১৮৬৬-১৯৩৯) ১৮৬৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা জেলার বগজুরী গ্রামে জন্ম নেন দীনেশচন্দ্র সেন। ব্রাহ্ম-বিশ্বাস অনুসারী শিক্ষক-উকিল ঈশ্বরচন্দ্র সেন ও সনাতন ধর্মাবলম্বী রূপলতা দেবীর সন্তান ছিলেন তিনি। বাল্যকাল থেকে বাংলা ভাষা ওসাহিত্যের গবেষণায় তিনি সাধক হয়ে ওঠেন। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল ও ঢাকা কলেজে অধ্যয়নের মাধ্যমে তিনি এন্ট্রান্স ও এফ. এ. (ইন্টারমিডিয়েট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৯ সালে দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রাইভেট ছাত্ররূপে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অনার্সসহ বি.এ. পাশ করেন। তিনি হবিগজ্ঞ হাইস্কুল, কুমিল্লার শম্ভুনাথ ইনস্টিটিউশন ও ভিক্টোরিয়া স্কুলে প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০৯ সালে দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার নিযুক্ত হন এবং পরের বছরই তিনি সিনেট সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ১৯১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলাে নিযুক্ত হন। ১৯২০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদে অভিষিক্ত হন। পরের বছর তাঁকে ডি.

লিট. (ডক্টর অব লিটারেচার) উপাধি দেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । সরকার তাকে ‘রায়বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এই পণ্ডিত অসম্ভব নিষ্ঠাবান শিক্ষক ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাঁর মতাে মানবপ্রেমী সমাজে দুর্লভ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আরেক দিকপাল কবি জসীম উদ্‌দীনকে দীনেশচন্দ্র সেনের পিতৃতুল্য অভিভাবকত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেন। পূর্ব বাংলার প্রাচীন গীতিকবিতা (পুঁথি) সংগ্রহে বিশেষভাবে ময়মনসিংহ গীতিকা সংগ্রহে কবি জসীম। উদদীন কাজে লাগিয়েছিলেন। বাংলার প্রাচীন পুঁথিসাহিত্য সংগ্রহ ও সম্পাদনায় দীনেশচন্দ্র সেন বিশাল ভূমিকা রেখে গেছেন। বাংলা ও ইংরেজিতে কাব্যগ্রন্থ, ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগ্রন্থ সব মিলিয়ে তাঁর সত্তরখানা অত্যন্ত মূল্যবান বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহ গীতিকা ইংরেজী ও ফরাসী ভাষায় অনুবাদ করান এবং নিজে ইংরেজীতে ‘History of Bengali Language and Literature' পুস্তক রচনা করেন; এই বইটি রবীন্দ্রনাথের নােবেল প্রাইজ পাওয়ার পথ সুগম করে। ৭৫ বছর বয়সে ১৯৩৯ সালে দীনেশচন্দ্র সেন ইহলােক ত্যাগ করেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন →
বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ

প্রকাশকের অন্য বইসমূহ