নদী কারো নয়

৳ 600.00

লেখক সৈয়দ শামসুল হক
প্রকাশক অন্যপ্রকাশ
আইএসবিএন
(ISBN)
9789845024624
ভাষা বাংলা
পৃষ্ঠার সংখ্যা ৩১২
সংস্কার 1st Published, 2018
দেশ বাংলাদেশ

নদী কারাে নয়’ সৈয়দ শামসুল হক-এর লেখা শেষ উপন্যাস। ২০১০ সালের মার্চ মাসে তিনি উপন্যাসটি মাসিক কালি ও কলম’-এ লিখতে শুরু করেন এবং ২০১৬-র এপ্রিল মাসে শেষ কিস্তি লেখেন । এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে প্রয়াত হন। ফলে উপন্যাসটি আর শেষ করা হয়ে ওঠে না। তিনি এই উপন্যাসটি লেখার সময় সচেতনভাবে কিছু কিছু লিখিত অংশের পুনরাবৃত্তি করেন এবং এভাবে লেখার ব্যাখ্যাও একটি আলাপচারিতায় উল্লেখ করে যান। মইনুল হােসেনের মনে হাহাকার—ওই যারা কাছারির মাঠে পাকিস্তানের নিশান নিয়ে নাচানাচি করছে, তাদের কি জানা নাই আধকোশা আর আমার দেশের নদী নয় ? র‌্যাডক্লিফ সাহেবের লাল পেন্সিলের দাগে আধকোশা এখন হিন্দুস্তানের! জলেশ্বরীর পাড় বরাবর নদীই এখন হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের সীমান্ত। হাহাকার আজ থেকে নদী তবে আর আমার নয়! এই আধকোশা এতকাল পরে তবে পর হয়ে গেল। এখন সে সীমান্তের ওপারে! আর, সীমান্তই কাকে বলে ? কোনাে রেখা তাে দৃষ্টিপথে নাই। আছে! র্যাডক্লিফ সাহেবের টেবিলে বিছানাে বাংলার মানচিত্রের বুকে লাল পেন্সিলের দাগ! যেন রক্তধারা! রক্তের রেখার ওপারে এখন আধকোশা। ওপারের ওই বালি-বিস্তীর্ণ পাড় আর আমার নয়। ওপারের ওই ঝাউগাছ আমার নয়। ঝাউগাছের ভেতর দিয়ে বহে যাওয়া বাতাসও আর আমার নয়! বালির বুকে ওই ঘূর্ণিও আমার নয়। খেয়াঘাটের ওই বিরলে যে শনের ছাপড়া চোখে পড়ে, ওই যে সেই ছাপড়ায় চা বানায় হাশমত, তার চুলার আগুনও আর আমার নয়, তার গেলাশের চা-ও আর আমার নয়, তার ছাপড়ার আড়ে ঝুলানাে মালভােগ কলার ছড়াও আমার নয়, ওই পায়ে চলা পথের চিহ্ন আর আমার নয়, ওই সরু পথটির উঠে যাওয়া ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের সড়কে, তাও আর আমার নয়। আর আমার পায়ের তলায় তার ধূলি না লাগিবে হে! অন্য দ্যাশের ধূলি হয়া গেইছে আইজের ফজরে। ওপারের ওই আসমানও বুঝি পর হয়া গেইছে। সব মিছামার হয়া গেইছে গাে। বুক ভাঙি নিয়া গেছে ঢলের আগেই এ কোন ঢল কোন পর্বত হতে নামিয়া! ফলে সম্পূর্ণ এক বিশৃঙ্খল এবং বিসদৃশ্য জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন এই ‘নদী কারাে নয়’-এর ভেতরে বড় বেদনাদায়কভাবে প্রতিফলিত হয়ে উঠেছে।

সব্যসাচী লেখক' হিসেবে খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন সাহিত্যিক, যিনি একাধারে কবিতা, ছোটগল্প, নাটক, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন। ৬২ বছরের দীর্ঘ লেখক-জীবনে তিনি সাহিত্যকর্ম ছাড়াও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার কাজও করেছেন। খ্যাতিমান এই লেখক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাই-বোনের মাঝে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড়। কৃতিত্বের সাথে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করলেও পরের বছরই বম্বে পালিয়ে গিয়ে সেখানে একটি সিনেমা প্রোডাকশন হাউজে কাজে যোগদান করেন। এরপর ফিরে এসে কলেজের পাট চুকিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও স্নাতক শেষ করেননি। সৈয়দ শামসুল হক এর বই দর্শক ও সমালোচক উভয় সমাজেই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক এর বই সমূহ এর মধ্যে 'অনুপম দিন', 'সীমানা ছাড়িয়ে', 'খেলারাম খেলে যা', 'এক মহিলার ছবি' ইত্যাদি উপন্যাস; 'নারীগণ', 'ঈর্ষা', 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' ইত্যাদি কাব্যনাট্য, এবং 'পরাণের গহীন ভিতর', 'প্রতিধ্বনিগণ' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। এছাড়াও সৈয়দ শামসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, ছোটগল্প, শিশুতোষগ্রন্থ ইত্যাদি। সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে, যেগুলোর মধ্যে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত 'একুশে পদক' উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন। কীর্তিমান এই সাহিত্যিক ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন →
বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ