“ওঙ্কার” বইয়ের ভেতর থেকে:
আহমদ ছফা সাহিত্যচর্চা শুরু করেন উপন্যাস দিয়ে। বেশ কয়েকটা ছােটো গল্প লিখে হাত মসকের করার প্রচলিত নিয়মটি তিনি মানেননি; তাঁর প্রকাশিত প্রথম বইটিও একটি উপন্যাস। ছফার উপন্যাস আকারে ছােটো হলেও কোনােটাই কিন্তু ছােটো গল্পের সম্প্রসারণ নয়, এগুলাে একেবারেই উপন্যাস। চেনাজানা জীবনের ভেতরের ব্যাপারটা নানা দিক থেকে দেখার দায়িত্ব নিয়ে সমাজ ও রাজনীতির ভাঙাচোরায় কাজ করছে কোন রহস্য, তারই অনুসন্ধানে ছফা নিয়ােজিত। সুখ ও স্বস্তি জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি কাজ করেন এমন সব পরিবেশ নিয়ে যা বেশির ভাগ সময়ে তার স্বভাবের অনুকূল নয়। পাঠককে তিনি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন যাদের সঙ্গে বেশির ভাগ সময়েই তিনি নিজে বা তাঁর পাঠকরা তাদের পছন্দ করেন না; অন্তত তাদের অনেক কাণ্ডকীর্তিতে সায় দেওয়া মুশকিল। সেই খুচরােখাচরা ও টুটাফাটা মানুষের একেকটা আস্ত চেহারা তৈরি করতে ছফাকে রীতিমতাে যুদ্ধ করতে হয় এবং পাঠককে তিনি উস্কে দেন এ যুদ্ধে নেমে পড়তে।
‘ওঙ্কার’-এ আহমদ ছফা গপ্পো ফাঁদতে বসেননি, কাহিনীর সত্র ধরে পাঠককে তিনি টেনে নেন এমন একটি জায়গায় যেখানে পৌছে গল্পটা ভুলে গেলেও কিছু এসে যায় না, কাহিনী গৌণ হয়ে সেখানে প্রবল হয়ে ওঠে অনেক দিনের মানুষ গ্লানি, জড়তা ও শােষণ এবং গ্লানি থেকে মুক্তির রক্তাক্ত সংকল্প।