“আঙ্গারধানি” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
ভাবছি বিয়ে করব। জমানাে টাকাগুলাে মিলে মিলে অনেক হলে দেশে চলে যাবাে। চলে যাবাে অচেনা কোনাে এক গ্রামে। বাড়ি করবাে। চাষবাস করবাে। একটা মেয়ে হবে। লিলিপুটের মতাে ছােট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে কাদামাটির পথে হাঁটবাে। কোল থেকে নেমে ছােট্ট ছােট্ট পায়ে সে বাবার সাথে হেঁটে যাবার জন্যে বায়না ধরবে। তাকে বুলবুলি পাখি দেখাবে। একসাথে মিলে চুরি করবো টিয়া পাখির ডিম। প্রচন্ড বর্ষায় বাপ-বেটি মিলে ধরবাে কই মাছ। কাচা কলা আর টাকি মাছের ভর্তা খেয়ে আরামের ঢেকুর তুলব। রাত হলে বুকের মধ্যে ছােট্ট মেয়েকে নিয়ে দেবাে ঘুম। ঘুমানাের আগে গল্প হবে। অনেক রাত পর্যন্ত গল্প। আমি তাকে ভাইজানের কথা বলব। বলব নিশা আপাকে ভালােবাসার কথা, পৃথিবীর প্রথম দশটা ভালাে মানুষের একজন জহর ভাইয়ের কথা, হারিয়ে যাওয়া প্রাণের বন্ধু কমলেশের কথা, আরাে কত কি!
মাঝে মাঝে মেয়েকে রূপকথা শােনাবাে। শুনতে শুনতে দু চোখের পাতা ভারী হয়ে আসবে তার। বলবাে, ‘খুকিরে, মারে তাের মতােই বেলি ফুলের, মালতী আর সন্ধ্যাবকুলের মতাে একটা মেয়ে ছিলাে। পচা একটা সাপের দংশনের কারণে সে এখন কবরে থাকে। ঘুমায়। সােনার কাঠি তার শরীরে ছোঁয়ালেই ঘুম ভাঙবে। কিন্তু সেই সােনার কাঠি কই লুকানাে জানা নেই। পুতুল নামের সন্ধ্যাবকুলের মতাে মেয়েটাকে তাের বাবার খুব মনে পড়ে। খুব মনে পড়ে। সে তাের বাবার বােন। তাের ফুপি ….। এভাবে বলতে বলতে আমার গলা ধরে আসবে। টপটপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়বে চোখ থেকে…।