“অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি” বইটির মুখ বন্ধ থেকে নেয়াঃ
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে যাদের নাম লেখা থাকবে তাদেরই। একজন জগৎজ্যোতি দাস। হাসিমুখে স্বাধীনতার বেদিমূলে নিজের জীবন উৎসর্গ করে যারা আমাদের পরাধীতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি বীরত্বে শীর্ষস্থানীয়। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের এক অখ্যাত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে জগৎজ্যোতি মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তা অনেকটা বিস্ময়কর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জগৎজ্যোতির নেতৃত্যুধীন দাস পার্টি ভাটি অঞ্চলে পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের কাছে ছিল আতঙ্কের নাম। অনেকটা নিজস্ব পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনাকারী এই দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধার কাছে অসম্ভব বলে কিছু ছিল না। হাসিমুখে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে পারতেন তিনি। দাস পার্টির আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর রুটে নৌ-যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পাক সরকার। দাস পার্টি নৌপথে এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে তারা কখনাে কখনাে দিনে আট নয়টি কার্গো-কনভয়ও ডুবিয়েছেন বা ধ্বংস করেছেন। এছাড়াও একের পর এক ভাটির জনপদকে হানাদারমুক্ত করে জগৎজ্যোতি যুদ্ধের ময়দানে হয়ে উঠেছিলেন। জীবন্ত কিংবদন্তির নায়ক। যেদিন যুদ্ধে তিনি শহীদ হন সেদিনও তাঁর নির্ভুল নিশানায় প্রাণ হারায় ১২ জন পাকসেনা। এরপরই তাকে সর্বোচ্চ মরণােত্তর খেতাব প্রদানের ঘােষণা প্রদত্ত হয়। কিন্তু বাস্তবতা এই মুক্তিযােদ্ধাকে তার প্রাপ্য সম্মান থেকে দূরে ঠেলে রেখেছে। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার ঘােষিত সম্মাননা আজও যুক্ত হয়নি তার নামের পাশে।
মুক্তিযুদ্ধে জগৎজ্যোতির অসামান্য অবদান সর্বজনবিদিত। কিন্তু তিনি যেন আজ বিস্মৃত হতে যাচ্ছেন ইতিহাসের পাতা থেকে। মুক্তিযুদ্ধকালে দাস পার্টি ভাটির জনপদে যেসব দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছিল সেই অভিযানগুলােও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কালের গহ্বরে। ইতিহাসকে ধরে রাখার তাগিদ থেকেই জগৎজ্যোতি সম্পর্কিত এই উদ্যোগ।
মুক্তিযুদ্ধের পর তিন যুগ অতিবাহিত হওয়ায় জগৎজ্যোতির জীবন ও যুদ্ধ সংক্রান্ত অনেক তথ্য আজ বিলুপ্ত। কিন্তু আমার চেষ্টার কোনাে ত্রুটি রাখিনি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবেচনায় বইটি সহায়ক হবে, এটাই প্রত্যাশা।