“আন্না কারেনিনা” বইয়ের ভূমিকার থেকে নেয়া:
ল্যেভ তলস্তয় একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, লােককাহিনীকার, শিশুসাহিত্যিক। সাহিত্য সৃষ্টির সূচনা ঘটে তার উনিশ বছর বয়স থেকে। তখন তিনি দিনলিপি লেখা শুরু করেন। সালটা ১৯৪৭। মার্চ মাস থেকে জুন পর্যন্ত এ চারমাস তিনি দিনলিপি লিখেছিলেন। বছর তিনেক দিনলিপি লেখা বাদ দিলেও পুনরায় দিনলিপি লেখা শুরু করেন ১৯৫০ সালে। আর তা অব্যাহত ছিল মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। সমালােচকবৃন্দ একমত যে, সরাসরি এই দিনলিপির মাধ্যমেই সাহিত্য ক্ষেত্রে তলস্তোয়ের উত্তরণ’। তাঁর দিনলিপি নিছক সাধারণ কিছু নােট নয়, “এই লেখাগুলি তাঁর সাহিত্যচর্চার নিদর্শন এবং সাহিত্যের মালমশলারূপে গণ্য করা যেতে পারে।” অর্থাৎ বাস্তবতার লেখক অন্যতম উপাদান যেমন, এক, ১৮৫৬ সালে তাঁর যে জনৈক ভূস্বামীর জীবনপ্রভাত’ গল্পটি প্রকাশিত হয়, সে গল্পে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি রয়েছে।
দুই. ককেশাসে চাকুরি করতে গিয়ে যে অর্জন করেছিলেন, তার ভিত্তিতে শিশুদের জন্যে লিখেন একটি আকর্ষণীয় উপাখ্যান ককেশাসের বন্দি’। তিন, ১৯১২ সালের নেপােলিয়ন-বিরােধী যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে ঐতিহাসিক মহাকাব্যিক উপন্যাস যুদ্ধ ও শান্তি’ লিখেন। এ ধরনের উদাহরণ আরও দেওয়া যাবে।
অরুণ সােম তাঁর রুশ সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থে তলস্তয়ের সাহিত্য জগতকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন—এক. সাহিত্য সৃষ্টির উদ্যোগ পর্ব; দুই. ঔপন্যাসিক তলস্তয়, তিন, গল্পকার তলস্তয়, চার, লােককাহিনীকার, পাঁচ, শিশু সাহিত্যিক, ছয়, নাট্যকার তলস্তয়।