“প্রিয়তম ফ্রাউলি বাউয়ার,…আপনার চিঠি আজ মেঘের বুক চিরে আমার ওপর পুষ্পবৃষ্টির মতো ঝরছে। এ হলো সেই চিঠি, যে-চিঠির জন্যে আমি অধীর আগ্রহ, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছি।” কী আবেগতপ্ত, হৃদয়ের গহনলোলাক থেকে উঠে আসা ভাষা! কে লিখছেন এই চিঠি? প্রাপক যিনি তার নামতো চিঠির শুরুতেই উত্তীর্ণ হয়ে আছে। কিন্তু প্রেরক কে-সুলুকসন্ধান করলে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। বিশশতকের মহান লেখক তিনি, আধুনিক কথাসাহিত্যের কিংবদন্তী পুরুষ ফ্রানৎস কাফকা। কাফকার প্রেমানুভব যে কতটা গভীর ছিল, এই চিঠির উল্লিখিত ছত্রগুলোতে শুধু নয়, একাধিক প্রেমিকাকে লেখা চিঠির পর চিঠিতে এর নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। সংবেদনশীল কাফকা যেমন তার লেখায় আধুনিক দ্বিধাপন্ন মানুষের সংকট আর আমলাতান্ত্রিক মুখোশকে টেনে খুলে ফেলে সমসময়কে আমাদের সামনে হাজির করেছিলেন, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে তার হৃদয়াবেগ যে কতটা তীব্র ছিল, যারা তার জীবনী পড়েছেন, সেই তথ্য তাদের অজানা নেই।
রিচি রবার্টসন, তাঁর সর্বশেষ জীবনীলেখক। জানাচ্ছেন, কাফকা চারজন নারীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসেছিলেন। এদেরকে ঘিরে তাঁর হার্দিক অনুভব যেমন গভীর হয়ে উঠেছিল, তেমনি ঘটেছিল সৃজনীপ্রতিভার বিস্ময়কর স্ফুরণ। এই নারীরা হচ্ছেন ফেলিস বাউয়ার, গ্রেতি ব্লক, মিলেনা রেসেনস্কা এবং ডোরা ডায়মন্ট। সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন তিনি। নতুন ধরনের গল্প আর ন্যারেটিভের সুবাদে গত শতকের সবচেয়ে আলোচিত কথাসাহিত্যিক ফ্রানৎস কাফকা। আধুনিক ব্যক্তিমানুষের সংকট আর অস্তিত্বের তীব্র মোথিত রূপ তাঁর লেখায় এমনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে যে, একক কোনো ভৌগোলিক পরিসরে তা সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। বিশ্বসাহিত্যের চেহারাকেই বদলে ফেলেছিলেন তিনি।