নারীর অন্তস্তল, তাদের অভীপ্সা এবং সংকট-সংঘাতময় আর্দ্র জীবনচর্যা প্রাবন্ধিক মাহমুদা খাতুনের আগ্রহ অভিনিবেশের কেন্দ্রীয় বিষয়। গ্রন্থভুক্ত পাঁচটি প্রবন্ধের কেন্দ্রে রয়েছে বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ-তারাশঙ্করের নারী রূপায়ণের রহস্য উন্মোচন ও স্বরূপ সন্ধান। সাধু ভাষারীতিতে লেখা শৈবলিনী প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বৃন্তছেঁড়া কুসুম শৈবলিনীর প্রণয়-পরিণয় ও পরিণতির এক দার্শনিক ভাষ্য যোজনা করেছেন। অতঃপর একে একে মৃণ্ময়ী-কুন্দনন্দিনী-রোহিণীকে অতিক্রম করে রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের নারীমণ্ডলীর সংকটাপন্ন দাম্পত্যের পরিণাম বিচারে মনোযোগী হয়েছেন। কিন্তু শেষ অবধি তাঁর অন্বেষণ এক নতুনতর আবিষ্কারে সচকিত হলো। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা-র নসুবালা চরিত্রের শুকসারী কথা উপন্যাসে নতুন রূপে ফিরে আসা প্রসঙ্গে অভিনব ব্যাখ্যা উপস্থাপন করলেন তিনি। ‘নসুবালা’ শেষোক্ত উপন্যাসে শহরে বাসা বেঁধেছে। পরিবর্তন হয়নি তার নারী স্বভাবে। প্রাবন্ধিকের ভাষায়-‘নসুর নারী অস্তিত্বই সত্য, মাতৃরূপেই সে ঈশ্বরের কৃপা চায়।… যার নিজ জীবনবৃক্ষই রইল শুষ্ক, নিষ্পত্র,…-সেখানে জগৎ শোভার জন্য এই ‘না-পুরুষ না-রমণী’র আকুলতা হৃদয়কে এক বিষাদিত বোধে আচ্ছন্ন করে দেয়।’-তৃতীয় লিঙ্গের মনোজগতে মাতৃত্বচেতনার অস্তিত্ব আবিষ্কার বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের এক অভিনব সম্পদ।