প্রাচীন ধ্রুপদী সাহিত্যের মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে, এই প্রশ্নে বস্তুবাদী শিল্পবেত্তারা মনে করেন, এ-ক্ষেত্রে সাহিত্যের বিচার করতে হবে দু’ভাবে— প্রথমত, ধ্রুপদী সাহিত্যকে বিশ্লেষণ করতে হবে সেই যুগের পটভূমিতে, সেই যুগের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে; এবং দ্বিতীয়ত, সব ধ্রুপদী সাহিত্যকেই বিচার করতে হবে ইতিহাসের আলােকে, অর্থাৎ আজকের সমাজে তার গুরুত্ব কতখানি। এই দ্বৈত বিচার-পদ্ধতিতেই ধ্রুপদী সাহিত্যের সম্যক মূল্যায়ন সম্ভব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মহাভারত সম্পর্কে এ যাবৎ কালে যত আলােচনা হয়েছে তার মধ্যে দু’-একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় কোনাে আলােচনাতেই মহাভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবিক দিকের বিশ্লেষণ পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। বর্তমান গ্রন্থে ধ্রুপদী সাহিত্য-বিচারের দ্বৈত-পদ্ধতির প্রয়ােগ করে মহাভারতের একটি সামগ্রিক ও আধুনিক মূল্যায়নের প্রয়াস আছে। মহাভারতের সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার, ধর্ম, দর্শন ও সর্বোপরি মানুষে-মানুষে সম্পর্কগুলির জটিল দিকগুলির এরকম পূর্ণাঙ্গ ও চিত্তাকর্ষক আলােচনা বাংলা ভাষায় অতি দুর্লভ। মহাভারত- চর্চায় এই গ্রন্থটি এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।