ঘড়ির কাঁটায় রাত একটা। জমিলার চোখে ঘুম নেই। নিবিড় অন্ধকার ঘরে নিস্তবদ্ধতাকে ভঙ্গ করে একা জেগে আছে। দিশেহারা, নিঃসঙ্গ, একাকী, অসহায় বয়ােবৃদ্ধা জমিলার দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। একাকী জীবন বয়ে বেড়ানাে কষ্টকর মনে হয়। কষ্ট ও বেদনায় ভারাক্রান্ত সে আজ একা, বড় একা। বৃদ্ধনিবাসের ছােট্ট এই অন্ধকার ঘরে কেউ নেই চোখের সীমানায়। গভীর এক ভাবনার সমুদ্রে ক্লান্ত জমিলার দু’চোখ জুড়ে শুধু কষ্ট ও বেদনার জল। শেষ রাতের নিস্তব্ধতায় বৃদ্ধাশ্রমের ছােট্ট ঘরের বিছানায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় জমিলার কিছুতেই আর দু’চোখে ঘুম আসতে চায় না। অতীত দিনের স্মৃতি বিস্তৃত যন্ত্রণায় ঘুমােবার চেষ্টা করেও কিছুতেই আর ঘুমােতে পারে না। অসহ্য বেদনার পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের বিছানায় ছটফট করতে থাকে সে। অচমকা সব স্বপ্ন যেন শেষ হয়ে গেছে। সাজানাে গুছানাে স্বপ্নগুলােকে চুরমার করে দিয়েছে নিজের সন্তানেরা। নিয়তির অদৃশ্য হিংস্র থাবায় জমিলা আজ একা। অবুঝ এক কষ্টে মােচর দিয়ে উঠে বুকের ভেতরটা। জমিলা বেগমের শূন্যতাবােধ যেন যেন টুটি চেপে ধরতে চায়। বিবর্ণ রঙে জমিলা বেগমের নিরব হতাশা যেন বুক ঠেলে বেড়িয়ে আসতে চায়। নিঃশব্দে, নিরবে অবশেষে নির্মম বাস্তবের মুখােমুখি দাঁড়িয়ে বৃদ্ধাশ্রমকেই আজ বরণ করে নিয়েছে। নিজের সংসার ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে নিঃসঙ্গ জীবন বয়ে বেড়ানাে সত্যিই বড় কষ্টদায়ক।