স্বদেশী যুগের মহা বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, বাঘা যতীন, শ্রীশ, কানাই বা সূর্য সেন…, সার বাঁধা সব অভিমন্যুর নাড়ি ছেঁড়া বেদনার আখ্যান ‘অভিমানী অভিমন্যু।’ কেবল এঁরাই নন, এ রকম অজস্র বিপ্লবীকে সে সময় অসহ অভিমান নিয়ে সরে যেতে হয়েছে। সরে যেতে হয়েছে এই পৃথিবী থেকে ফাঁসীর দড়িতে জীবনাহুতি দিয়ে, সেলুলার জেলের অন্ধকারে, অথবা জননী জন্মভূমি ছেড়ে। সেই সব অভিমানের আশ্রয় ভূমি এই উপন্যাস। এবং এ অভিমানও নতুন কিছু নয়। অভিমান ছিল মহাভারতের অর্জুন-পুত্র অভিমন্যু’রও। সময়টা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের। তখনকার জটিল রণ-কৌশল ‘চক্রবুহ্য’। ‘চক্রবুহ্য’ ভেদ করে ঢুকতে আর বেরুতে পারতেন কেবল অর্জুন। কেমন করে সেটা করতে হয়, একদিন সে কথা অর্জুন বোঝাচ্ছিলেন অভিমন্যুর মা’কে, আর অভিমন্যু ছিল মা’য়ের গর্ভে। মা’য়ের শ্রবণের মধ্য দিয়ে অভিমন্যু শুনতে পেয়েছিল কেমন করে ‘চক্রবুহ্য’ ভেদ করে ঢুকতে হয়, কিন্তু মা ঘুমিয়ে পড়ায় জানতে পারেনি কেমন করে বেরুতে হয় সে কথাটি। অর্জুনের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধের প্রয়োজনে অভিমন্যুকে ‘চক্রবুহ্য’ ভেদ করে ঢুকতে হয়। প্রত্যাশা ছিল অর্জুন তাড়াতাড়ি ফিরবেন। তিনি ফিরতে পারেননি। অর্জুন যথা সময়ে ফিরতে পারলে বা, মা ঘুমিয়ে না পড়লে অমন অসময়ে অভিমন্যুকে মেরে ফেলতে পারত না সাত মহারথী। সবে কিশোর বালক তখন সে। সেই অসহায় অভিমান। স্বদেশী যুগের বিপ্লবীদের অভিমানও ছিল অসহায়। আসলে অভিমন্যুরা কখনো মরে না। তখনকার, এখনকার, আপনার, আমার, সব সময়ের সব অভিমানের ভেতরেই কোথাও না কোথাও জড়িয়ে থাকে একজন করে অভিমন্যু। আখ্যানটি পড়বার পর এ রকম একটা অনুভব পাঠককে আচ্ছন্ন করতে বাধ্য।