চন্দ্র আখ্যান তাশরিক-ই-হাবিবের চতুর্থ গল্পগ্রন্থ। তিনি এগুলােকে আখ্যান হিসেবেই লিখেছেন। গল্প লেখায় তিনি সচেতন ও নিরীক্ষাপ্রিয়। কেননা, কথাশিল্পের সংবেদনশীল এ সাহিত্যরূপের প্রকরণগত কাঠামােই এমন, যেখানে বাহুল্য ও পুনরাবৃত্তি নিতান্ত পরিহার্য। তাছাড়া বিষয়বস্তুগত ভিন্নতা, শৈল্পিক গুণ ও ভাষাগত প্রাসঙ্গিকতা না থাকলে গল্প মার খায়। তার গল্প অন্য কারাে মতাে নয়। তিনি সমকালীন গল্পকারদের চেয়ে ভিন্ন পথে হাঁটতেই স্বচ্ছন্দ। তাঁর মতে ‘আমার একটি গল্প যেন অন্য গল্পের পুনরাবৃত্তি হয়ে না ওঠে বিষয়, আঙ্গিক ও উপস্থাপনারীতিতে। চারটি গল্পের এ সংকলনে গল্পকার বাংলা গল্পের ঐতিহ্যবাহী ধারা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচর্যিত উত্তরাধুনিক প্রবণতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে লােকজ জীবন ও সংস্কৃতি, ইন্টারনেটনির্ভর মহানাগরিক মানব সম্পর্কের ভাঙন ও অবদমন, যৌনকাতরতার আদিম উন্মােচন ও এর নেতিবাচকতার চালচিত্র তাঁর গল্পের উপজীব্য। এক্ষেত্রে আখ্যানে বিন্যস্ত হয় উত্তরাধুনিক সাহিত্যবৈশিষ্ট্য, উল্লম্ফনধর্মিতা, পরাবাস্তবতা, জাদুবাস্তবতা, চেতনাপ্রবাহ রীতি ও নাট্যগুণ। সংলাপকে তিনি প্রায় নৈঃশব্দ্যের পর্যায়ে নিয়ে যান, লেখায় ফুটিয়ে তােলেন শব্দময় ও শব্দাতীত বিচিত্র সংবেদনশীল অনুভব। তাঁর গদ্যরীতি একান্তই নিজস্ব কণ্ঠস্বরকে ধারণ করে।