মােগলরা ভারতবর্ষে এসেছিলেন উত্তর-পশ্চিম এশিয়ার রুক্ষ ও পার্বত্য অঞ্চল থেকে। তবে তাদের পূর্বপুরুষেরা দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গেই সমত এশিয়ায় বিচরণ করেছেন। শাসন এবং ধ্বংস করেছেন ইউরােপও। ভ্রাম্যমাণ যাযাবর ও পশুপালক গােষ্ঠী থেকে তারা ধাপে ধাপে উঠে এসেছিলেন ময়ূর সিংহাসনে। গড়ে তুলেছিলেন হৃদয়জয়ী সংস্কৃতি। নির্মাণ করেছিলেন চোখ জুড়ানাে সভ্যতা। শাসন করেছিলেন সুবিস্তৃত রাজ্যপাট। ব্যাঘ্ৰপুরুষ বাবুর হিন্দুস্তানে যে জৌলুসময় ও প্রতাপশালী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বাদশাহ্ হুমায়ূন ছিলেন তার দ্বিতীয় পুরুষ – ঔদার্য সারল্য আর বৈদগ্ধের কারণে যিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য। অবশ্য কারও কারও মতে সেগুলােই ছিল তাঁর দুর্বলতা। দূরদর্শিতার পাশাপাশি অদূরদর্শিতাকেও তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন কোথাও কোথাও। অফুরান বিদ্যানুরাগকে মূল্য দিতে গিয়ে আপন গ্রন্থাগারের সিঁড়ি থেকে পা পিছলে গিয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটেছিল। এই অকালমৃত, অথচ অকুতােভয় ও হৃদয়-ঐশ্বর্যে ভরপুর মানুষটি এবং তাঁকে ঘিরে থাকা স্বজন আর শত্রুদের নানান কর্মকাণ্ড ঘিরেই গড়ে উঠেছে। এই উপন্যাসের নিটোল আখ্যান। সম্রাট বাবুরের বিদূষীকন্যা গুলবদন, রাজমহিষী বেগা বেগম, হুমায়ূনের শিশুকন্যা আকিকা আর শেরশাহের সােহাগীকন্যা মুনিয়া এই আখ্যানকে খানিকটা ভিন্নভাবে প্রাণচঞ্চল ও আর্দ্র করে রেখেছে। এদের সঙ্গে পাঠকের চোখের জলের আত্মীয়তা গড়ে ওঠে সহজেই। গবেষণা আর সৃজনশীলতা, ইতিহাস আর কিংবদন্তি, ঘটনা আর বর্ণনা, চরিত্র আর সংলাপ, কথকতা আর হৃদয়ানুভূতি – পরস্পরের পরিপূরক হয়ে এখানে গড়ে তুলেছে। এক মনােহর কথাসাগর।