কাচের গ্লাস টেনে হঠাৎ কারও ভেতরে প্রবেশের শব্দে চকিত চোখ তুলে তাকায় আব্দুল আলিম। দুই ইনভেস্টিগেটরকে সঙ্গে নিয়ে সেলে প্রবেশ করলেন হোমিসাইড প্রধান আজম আলী। তিন জনের চোখেই কালো চশমা। আব্দুল আলিমের মনে হচ্ছে, যমদূতের মত তিনটা অশরীরী ছায়া যেন এগিয়ে আসছে তার দিকে। হয় জানটা নিবে, না হয় তাকে আস্ত গিলে খাবে। সে ভেবে পাচ্ছে না, তিনজন জলজ্যান্ত মানুষকে তার কাছে যমের মত মনে হচ্ছে কেন। ক্ষুধা, ভয় আর শঙ্কায় মুখের ভেতরটা শুকিয়ে জিহবাটা যেন তালুর সাথে লেপটে যাচ্ছে তার। সে ঢোক গিলার চেষ্টা করে, পারেনি। মুখের অভ্যন্তরটা যেন চৈত্রের খরতাপে শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ। ভয়ে তার সমস্ত শরীরের একটা কম্পন অনুভূত হয়। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে তার। তালুর সাথে জিহবা লেপটে গলাটা যেন ধরে আসছে। শত চেষ্টা করেও সে পানি চাইতে পারছে না। শুকনো মুখের সাথে পাল্লা দিয়ে তার হাত পা অবশ হয়ে আসছে। বুকের ভেতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছে তার। কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে পড়ছে। চোখে হঠাৎ ঝাপসা দেখা শুরু করে সে। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে। চারপাশটা লাটিমের মত কেমন যেন ঘুরছে শুধু। চেয়ারে বসে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। কানের ভেতরেও ভোঁ ভোঁ শব্দ হচ্ছে। নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছে গরম নিঃশ্বাস। আব্দুল আলিম প্রাণপণ চেষ্টা করছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার, কিন্তু পারছে না। পুরো শরীর অবশ হয়ে গেল নাকি? একবার ভাবল শুধু। পরক্ষণেই কানের বাঁ পাশে ভ্রমরের গুঞ্জনের মত কিছু একটা শুনতে পেল সে। দূর আকাশে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারার মত চোখের সামনে কিছু একটা অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গেই ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে যায় আব্দুল আলিম।