চান্দু মিয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র খোলার আগেই আমাদের বাড়িতে এসেছেন। তিনি হাতে করে পত্রিকার একটি কপি এবং তার মিষ্টির বালতি এনেছেন। তার কাছে শুনলাম, তিনি নাকি বাসের ভেতর মিষ্টি বিক্রির সময়ই শুনেছেন মোনায়েম খান খতম। হকারের কাছ থেকে দ্বিগুণ পয়সা দিয়ে পত্রিকা কিনে বাড়ি এসেছেন। চান্দু মিয়ার চোখ আনন্দে বিড়ালের চোখের মতো জ্বলজ্বল করছে। স্বাধীন বাংলা বেতারের খবর শুনে চান্দু মিয়া খুশিতে কয়েকটা লাফও দিলেন। তিনি বললেন, শোনো ভাতিজা, মোনায়েম খান যেমন শেষ, টিক্কা খানও শেষ। টিক্কা খান নামে যারে দেখানো হয়েছে সেটা ভুয়া টিক্কা খান। পাকসেনাদের মনোবল ঠিক রাখার জন্যই সরকার এমন নাটক সাজাইছে। কই এখন তো আর টিক্কা খানকে দেখায় না? ওই শালাও শেষ হইছে কইলাম, দেইখো। শুধু চান্দু মিয়া না আমাদের এলাকার অনেকেই এমনটা বিশ্বাস করেন। সেদিন চান্দু মিয়া যাওয়ার সময় পত্রিকাটি আমাকে দিয়ে গেলেন। আর তার বালতিতে থাকা মিষ্টি আনন্দে উপস্থিত সবার মাঝে বিলিয়ে দিলেন। মোনায়েম খান সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানতাম না। তার মৃত্যুর পর মানুষের কথাবার্তায় কিছুটা জানতে পেরেছি। মোনায়েম খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসনামলে। তার নৃশংসতা ছিল অবর্ণনীয়। তিনি দীর্ঘ ছয়-সাত বছর বাঙালি ছাত্র-জনতার বুকের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছিলেন। তার অত্যাচারে মানুষ অসহ্য হয়ে পড়ে। আন্দোলন বিক্ষোভ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আইয়ুব খানের পতনের আগেই তার পতন হয়। কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও তিনি সুযোগ বুঝে একাত্তর সালে আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পাকিস্তানি হানাদার শক্তির সঙ্গে হাত মিলান এবং স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।