বইটিতে মূলত একুশে পদক প্রাপ্ত(২০১৬) বিশিষ্ট আনবিক বিকিরণ বিজ্ঞানী ড.জসীম উদ্দিন আহমেদের সামগ্রিক জীবনের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।ড.জসীম উদ্দিন আহমেদ বর্তমান কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩১ সালে।তার পিতার নাম মৌলভী ওয়াজ উদ্দিন আহমেদ। লেখাপড়ার হাতেখড়ি বাড়ির পাশের প্রাইমারি স্কুলে,সেখান থেকে ধীরে ধীরে তার শিক্ষা,কর্মক্ষেত্র দেশের গন্ডি পেরিয়ে অতিদ্রুত বিশ্বমঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের পেক্ষাপট,২১’শে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত অধ্যায়,এর পরবর্তী বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহ আমরা বইটিতে দেখতে পাবো। কেন পুলিশ গুলি ছাড়লো?ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোরায়শি কেনই বা নির্বিচারে গুলি চালাতে নির্দেশ প্রদান করলেন? এই হতাহতের ঘটনা খতিয়ে দেখার তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে কি কি উল্লেখ করেছিলো? এসকল প্রশ্নের উত্তর সহজেই মিলবে বইটি হাতে নিলে। ড.জসীম উদ্দিন আহমেদ বিদেশে দীর্ঘ সময় চাকরি জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে কিছুসময় কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন।এরপর,সাহিত্য মননিবেশ করেন।তার সাহিত্যে আমরা বাংলার প্রায় প্রতিটি পদেরই প্রতিফলন দেখতে পাই।আধুনিক বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও নিজেকে কখনও ধর্মের থেকে দূরে রাখেন নি।কাস্পিয়ান সাগরের তীর থেকে বিদায় নিয়ে কবি লিখছেন, “নীরবে এসেছি আমি দূরদেশ থেকে, নীরবেই যাব চলে বিদায় অশ্রু ফেলে।” ধর্মের প্রতি অগাধ আস্থা থেকে,অগাধ বিশ্বাস থেকে তিনি একমাত্র মহাপ্রভুর সান্নিধ্য চান।কবির ভাষায়, “আমাকে করেছ সৃষ্টি তোমার করুণা দিয়ে আমি তো তোমারই হাতে গড়া,মহাপ্রভু? কি চাওয়া আছে তোমাকে বিনে?” ড.জসীম উদ্দিন এর অসাধারণ সৃষ্টি ছড়ানো শ্লোক দেখতে পাবো।সম্পূর্ণ নতুন ধারায় তিন লাইনের কবিতা।যার প্রথম ও শেষ লাইনের শেষ অক্ষরের মিল রক্ষার্থে কবি আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন।কবি সমাজের সকল দুঃখ দুর্দশা তার লেখায় ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন।সমাজের সকল স্তরেরই প্রতিফলন অসাধারণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে কবির কলমের কালিতে।আনবিক শক্তি কমিশন এবং এ সংশ্লিষ্ট কাজেই নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি।একজন সফল ছড়াকার,একজন শ্লোকবিদ,একজন নিভৃতচারী আধ্যাত্মিক প্রেমে মগ্ন কবি,ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ড.জসীম উদ্দিন আহমদের অবদানগুলো অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করে লেখক ফোরকান আহমদ তার গবেষণা কর্মের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।এই বই থেকে আমরা জানতে পারি-কর্মজীবনে বিজ্ঞানী ড.জসীম উদ্দিন আহমদ আনবিক বোমা তৈরির উপযোগী ফিসাইল পদার্থের অবৈধ পাচার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।তিনি আন্তজার্তিক আনবিক শক্তি আইন সম্পর্কিত বই প্রকাশেও ভূমিকা রাখেন।তিনি পৃথিবীর বহু দেশের প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত কারণে তাকে জীবনের সুদীর্ঘ ৪০ বছর প্রবাসে কাটাতে হয়েছে।বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাও করেচেন সমান তালে।এখন পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থ ৩৯ টি।উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- প্রেম সাগর,ছড়ানো শ্লোক,ছড়ার ঝোড়া,পদ্মাগঙ্গার কবিতা,আমার দেখা একুশে ফেব্রুয়ারি,ভাষা আন্দোলন,ছড়ার বাগান ইত্যাদি। নিজের ব্যক্তিজীবনে অসংখ্য সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন এই গুণি ভাষা সংগ্রামী। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ কারীদের নিয়ে করেছেন বেশ উল্লেখযোগ্য কাজ।একজন ভাষাসংগ্রামীকে জানতে হলে,বুঝতে হলে,ভাষা আন্দোলনের চাক্ষুষ স্মৃতিতে নিজেকে নিমজ্জিত করতে চাইলে এই বইটি পড়ার বিকল্প নেই।