‘রাজবন্দির রাজ্যকথন’ মূলত একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। এখানে বর্ণিত ঘটনাবলী ও চরিত্রগুলো মোটেই কাল্পনিক নয়। যদিও আপাতদৃষ্টিতে তা ব্যক্তি তথা লেখকের স্বগতোক্তির ভেতর দিয়ে প্রকাশিত আত্মকথন মনে হতে পারে, কিন্তু এর ভেতর দিয়ে লেখক তুলে এনেছেন একটি সময়ের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল, রূঢ় সমাজবাস্তবতা। স্পষ্ট করে বললে-আশির দশকে এদেশে সামরিক স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী যে শোষণ, নিপীড়ন, ৭১-এর মূল চেতনা পরিপন্থী সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতির সূচনা করে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক সাহসী সৈনিকের গল্প এটি। যে প্রতিবাদ-সংগ্রাম করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে। কিন্তু কথিত সমাজে রাজবন্দি তো দূরে থাক মানুষের সম্মানটুকুও পাওয়া যায়নি। মেলানো হয় একজন চোর-ডাকাতের সঙ্গে। সেখান থেকেই এই আখ্যানের উত্থান। আমাদের কথাসাহিত্যে জেলখানার জীবনপ্রণালী এমন সুনিপুণ গভীরতায় এর আগে অন্য কারও লেখায় খুব বেশি দেখা যায় না। পাশাপাশি লেখকের শৈল্পিক প্রকাশভঙ্গি, সরস বর্ণনা, তীর্যক মন্তব্য, ঘটনার বিন্যাস-সব মিলিয়ে লেখাটি যেকোনো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।