চাঁদের পাহাড়
ইংরেজি—মাধ্যমে পড়ালেখা করা রবার্ট লুই স্টিভেনসন, চার্লস ডিকেন্স, হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যানডারসন পড়–য়া হালজামানার কিশোর—তরুণ পাঠকের চোখে বাংলা উপন্যাস ম্যাড়মেড়ে রদ্দা জিনিস— ‘থ্রিলার বাংলায় ঠিক জমে না’— এই রকম একটা বস্তাপচা অভিযোগও আছে। এ—রকম অভিযোগ পুরোটাই যে বানোয়াট, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য সাতটি নয় পাঁচটি নয় মাত্র একটি উপন্যাস তাদেরকে পড়তে দিলেই কেল্লা ফতে হো গেয়া। উপন্যাসটির নাম চাঁদের পাহাড় (১৯৩৭), লিখেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪—১৯৫০ খ্রি.)। চাঁদের পাহাড় দুঃসাহসিক অভিযাত্রার কাহিনি, গা শিরশির—করা রোমাঞ্চকর উপন্যাস। এ উপন্যাসের নায়ক— ‘কেন্দ্রীয় চরিত্র’ না—বলে তাকে নায়ক বলিÑ শঙ্কর রায় চৌধুরী। বাঙালি এই তরুণ আফ্রিকায় গিয়েছিল কেরানির চাকরি নিয়ে। কিন্তু রক্তের ভেতরে যার অভিযাত্রীর দুঃসাহস টগবগ করে, কেরানির চাকরি তার ভালো লাগার কথা নয়। শঙ্করের আলাপ হলো ডিয়েগো—র সাথে। বন্ধু জিম—কে সঙ্গে নিয়ে ডিয়েগো সোনার খনির সন্ধানে গিয়েছিল, কিন্তু তারা খুঁজে পায় হীরার খনি। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য, হীরা সংগ্রহ করার আগেই বুনিপ নামক অতিকায় এক হিংস্র জলচর প্রাণী জিম—কে মেরে ফেলে। ডিয়েগো—র কাছে এই রোমাঞ্চকর ঘটনা শুনে শঙ্কর ডিয়েগো—র সঙ্গে হীরার খনির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েÑ কে করে তখন আর ছাপোষা কেরানির চাকরি!
চাঁদের পাহাড় আফ্রিকার দুর্গম গহিন অরণ্যে হীরার সন্ধানে ছুটে—চলা এক বাঙালি তরুণের শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি। পদে পদে তার রহস্য আর মৃত্যুর হাতছানি। কী নেই সেই অলক্ষুনে বনে! —আছে মানুষখেকো সিংহ, অজগর সাপ মাম্বা, পৌরাণিক গল্পের দানব কিয়ানপ্রেটি… এখানে ওখানে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির আগুনে লাভা। সঙ্গী ডিয়েগো—কে বুনিপ আক্রমণ করে মেরে ফেললে শঙ্করকে অগত্যা ঢুকে পড়তে হলো ওই অতিকায় হিংস্র প্রাণীটির গুহার ভেতরে! সেখানে ঢুকে শঙ্কর দেখতে পায়, গুহাটা আসলে হীরার খনি। শঙ্কর তখন কী করবে? —প্রাণ নিয়ে ছুটে পালাবে, নাকি হীরা কুড়োবে?
উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে শঙ্করকে কালাহারি মরুভূমিতে দেখতে পাই : ঘোরতর বিপদে সে। সঙ্গে খাদ্য নেই, পান করবার জন্য অবশিষ্ট নেই এক ফোটা জল। তাকে হামলা করার জন্য মাথার উপরে উড়ছে শকুনের ঝাঁক, সামনে ওৎপেতে বসে আছে সিংহের পাল। —তারপর কী হলো? উঁহু, সেটি বলছিনে। পরের মুখে ঝাল খেলে স্বাদ লাগে নাকি! —আপনিই বলুন।