কবিতা এক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম। কারণ, মানুষের অনুভূতি ও উপলব্ধির সবচেয়ে সৎ ও অকৃত্রিম প্রতিফলন ঘটে কবিতায়। এতে একজন সৃজনশীল কবির ভেতর নীরব অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কবিতা-অরণ্য হলো সেই রহস্যমেদুর রেইন ফরেস্ট, যেখান থেকে অক্সিজেন নেয় বহু বিষণ্ন ফুসফুস আর ত্যাগ করে খেদ ও নির্বেদ, গ্লানি ও হতাশা। কখনো অবহেলার কার্বন ডাই-অক্সাইড, এমনকি কোনো সময় মনোক্সাইডও। আর সেই বৃষ্টিবন ঐসব বিষ ও বিষাদকে ফের রূপান্তরিত করে ফেলে দ্রুত অম্লজানে। কবিতার রয়েছে সেই অভিনব সালোকসংশ্লেষণী ক্ষমতা। রহস্য ও বিস্ময় জাগানিয়া এমনি রোমাঞ্চের সাথে যুক্ত রয়েছি সেই স্কুলজীবন থেকে। কবিতা-কবিতা করে কত পাগলামি, কত ভরে যাওয়া প্রাণপাত্র, কত উচ্ছ্বলতা, কত প্ৰেম-প্রণয় আর উপচেপড়া কত উন্মাতাল সকাল-সন্ধ্যা-রাত্রি!
অসহায় মনের ভাষাকে চিরে-ভেঙে বিশৃঙ্খল করে দিয়ে নেমে আসে কবিতা। এ যেন অনুভূতিরই এক অবিকৃত প্রতিচ্ছবি, উপলব্ধিরই এক অকপট আল্পনা। পরম মমতায় কবি তাকিয়ে থাকেন তাঁর সদ্যোজাত কবিতার দিকে। কবির মনে আসে শান্তি । এ শান্তি সৃজনের, এ শান্তি গর্ভমোচনের পরম ও অনির্বাচনীয়।
সময় যত গড়িয়েছে, ধীরে ধীরে বদলে গেছে আমার নন্দনভাবনা। প্রেম, বিরহ ও হতাশার আখ্যান থেকে ক্ষমতা ও লোভের ইশারার কাহিনিচূর্ণ- এই সবকিছুর সমাবেশ ঘটেছে ‘অনুরাগের স্পর্শ’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোতে। আশা করি, গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে পাঠ করলে পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে আমার কবিতাকৃতির ক্রমরূপান্তর। শেষ কথা হলো, সহজ ও সাবলীল ভাষায় কবিতায় যা বোঝাতে চেয়েছি, তা পাঠক যদি ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেন এবং মনোযোগী হয়ে গ্রহণ করেন, সেটাই হবে আমার বড় প্রাপ্তি।
কবিতা লেখার এই দীর্ঘ অভিযাত্রায় সংস্পর্শে এসেছি বহু স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিক ও গুণী মানুষের, পেয়েছি তাদের অকৃত্রিম সাহচর্য ও অনুপ্রেরণা। সবার কাছে আমার ঋণ ও কৃতজ্ঞতা। জীবনের সঞ্চয় থেকে কিছুই ফেলবার নয়। সবই মূল্যবান ও মায়ায় জড়ানো। কবিতাগুলো বাছাই করতে গিয়ে বাদ পড়েছে অনেক প্রিয় নাম, স্থান স্মৃতিভরা রোমাঞ্চ। বাদ পড়া সেই প্রিয় পঙ্ক্তিগুলোর প্রতি বাড়ছে মায়া ও নস্টালজিয়া।
‘অনুরাগের স্পর্শ’ আমার ষষ্ঠ কবিতার বই। বইটি পাঠকদের
কাছে গৃহীত হলেই আমার প্রত্যাশা পূরণ হবে।
মাহাবুবা লাকি
কবি ও কথা সাহিত্যিক