১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ সমগ্র বাংলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যার প্রক্রিয়া এবং প্রকৃতি যেমন ছিলাে পৈশাচিক, ভয়াবহ—তেমনি ছিলাে নৃশংসতা আর নিষ্ঠুরতার স্বাক্ষরবাহী। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কখনাে গুলি করে, কখনাে বেয়ােনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, কখনাে জবাই করে, কখনাে আগুনে পুড়িয়ে, আবার কখনােবা নির্যাতনের পর গর্তের মধ্যে ফেলে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পুড়িয়ে এবং জবাই করে হত্যা বিষয়টিতেও ছিলাে নানা প্রক্রিয়া-পদ্ধতি। বর্তমান গ্রন্থে এ বিষয়গুলির পরিচয় পাওয়া যাবে।
পাকিস্তানিরা সমগ্র দেশে অসংখ্য নির্যাতন কেন্দ্রও গড়ে তুলেছিলাে। এসব নির্যাতন কেন্দ্রে লক্ষ লক্ষ মা-বােন, যুবা-বৃদ্ধা, শিশু-কিশােরদের ধরে এনে হত্যা করে কবরের নামে যত্রতত্র মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিলাে।
‘৭১-এ গােটা দেশটাই পরিণত হয়েছিলাে বধ্যভূমি আর গণকবরে। হত্যা এবং হত্যার পর লাশগুলি ফেলে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানিরা নির্দিষ্ট কিছু স্থান বেছে নিয়েছিলাে।
বর্তমান গ্রন্থের প্রথম ভাগে বৃহত্তর জেলাভিত্তিক বধ্যভূমি ও গণকবরগুলির একটা সাধারণ পরিচয় ইতিহাস আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এতৎসংক্রান্ত সংবাদ, সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে গ্রন্থের দ্বিতীয় ভাগে—যা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনায় সহায়ক হবে বলে আমাদের ধারণা। বধ্যভূমি-গণকবর কেন্দ্রিক বেশ কিছু শহীদ স্মারক নির্মিত হয়েছে সারা দেশ জুড়েই। এ সংক্রান্ত সংবাদগুলিও গ্রন্থভুক্ত করা হয়েছে। আলােকচিত্রও রয়েছে বেশ কিছু। আমাদের বিশ্বাস এ গ্রন্থ পাঠে বাংলাদেশের বধ্যভূমি ও গণকবর সম্পর্কে একটি নির্ভরযােগ্য চালচিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে।